ভুটানের জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
মঙ্গলবার ভুটান যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত সফরের পর পর ভুটানে তিন দিনের এ রাষ্ট্রীয় সফর বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভুটানের জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বাংলাদেশ প্রায় ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিনিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হতে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভুটানে বিনিয়োগ করা জলবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরাসরি বাংলাদেশে আমদানি করা সম্ভব নয়। ভারতের ভূমি ব্যবহার করে এই বিদ্যুৎ আনতে হবে। এজন্য গতবছর ভারত মৌখিক সম্মতি দিলেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় গত ডিসেম্বরে ‘গাইডলাইন্স অন ক্রসবর্ডার ট্রেড অফ ইলেকট্রিসিটি (আন্ত:সীমান্ত বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত নীতিমালা)’ অনুযায়ী কেবল দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানি-রপ্তানির বিধান রাখা হয়। যা ভুটান বা নেপাল থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে এবারের ভারত সফরে এই জটিলতার সমাধান হয়েছে। তবে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে জটিলতা এখনও কাটেনি। যা দ্রুত নিরসনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর ৬২ দফা যৌথ ঘোষণার ২৮ নম্বর দফায় বিদ্যুৎ, পানিসম্পদ, বাণিজ্য, ট্রানজিট এবং যোগাযোগ খাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার সুবিধার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। ২৮ দফার মধ্যেই ভুটানের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানি কিংবা ভুটানের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশি বিনিয়োগের বিষয়কে স্বাগত জানানো হয়েছে। স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে তিন দেশের (বাংলাদেশ-ভারত ও নেপাল) মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টি। বলা হয়েছে, যখন এই তিন দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বৈঠক করবে, তখনই এই সমঝোতা স্মারক সই হবে।
এদিকে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক জানান, নেপালে অনুষ্ঠিতব্য চতুর্থ বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) শীর্ষ সম্মেলনে এ বিষয়ে একটি স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ভুটানের যে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেখান থেকে ভারতের ওপর দিয়েই বিদ্যুৎ আনতে হবে বাংলাদেশকে। এজন্য ভারতকে সঞ্চালন চার্জসহ আনুষঙ্গিক কিছু অর্থ দিতে হবে বাংলাদেশকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশের ভুটানের জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করাটাই অনেক বড় ব্যাপার। বিদ্যুৎ কিভাবে আসছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভারত সঞ্চালন চার্জ নিলেও এই বিদ্যুৎ আমদানি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে ভুটান দেড় হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কেন্দ্রটি হলো এক হাজার ২০ মেগাওয়াটের। ভুটানের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অধিকাংশই ভারতের অনুদানে ও বিনিয়োগে নির্মিত। উৎপাদিত বিদ্যুতের বেশি অংশই ভারতে রপ্তানি হয়। ভারত এখানে আরও বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এদিকে নেপালে ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও দেশটি বর্তমানে মাত্র ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এখানেও ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি কয়েকটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে বা একক বিনিয়োগে নেপাল, ভুটান ও অরুণাচল প্রদেশে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চায় বাংলাদেশ। এ ছাড়া মিয়ানমারেও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে দেশটির সঙ্গে আলোচনা চলছে। মিয়ানমার প্রায় ৪০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তারা ভারত ও চিনের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তিও করেছে। বাংলাদেশও এ সুযোগ নিতে চায়।
বাংলাদেশে একমাত্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে অবস্থিত। এখানে ২৩০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এইসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সরকার আলাদাভাবে হাইড্রো পাওয়ার কোম্পানি গঠনেরও উদ্যোগ নিয়েছে।