ভোলার গ্যাস সিএনজি করে ঢাকায়

ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে এভাবে শিল্পে দেওয়া হবে। ছবি: এনার্জি বাংলা

ভোলার গ্যাসক্ষেত্র থেকে তোলা প্রাকৃতিক গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করে ঢাকার বিভিন্ন শিল্পগ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া শুরু করেছে বেসরকারি কোম্পানি ইন্ট্রাকো গ্রুপ।

বৃহস্পতিবার ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ের গ্রাফিক্স টেক্সটাইল লিমিটেডে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে জ্বালানি সরবরাহের নতুন এই পদ্ধতি উদ্বোধন করা হল।

বাংলাদেশে এই কার্যক্রম এটাই প্রথম।

ভোলার গ্যাসকে সিএনজিতে রূপান্তর করে শিল্পে সরবরাহের জন্য ২১ শে মে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ চুক্তি করে ভোলার গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।

চুক্তি অনুযায়ী প্রথমে দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস পরিবহন করলেও আগামী এক বছরের মধ্যে দৈনিক আরও ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরিবহন ও বিতরণের সক্ষমতা অর্জনের কথা জানিয়েছে ইন্ট্রাকো।

সুন্দরবন গ্যাস ফিল্ডের কাছ থেকে প্রতি ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস ১৭ টাকা দরে কিনে সিএনজি আকারে রূপান্তর ও দীর্ঘ পথ পরিবহনের পর ঢাকায় শিল্প গ্রাহকদের কাছে তা বিক্রি করা হবে প্রতি ইউনিট ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা দরে।

রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে উদ্বোধন শেষে প্রযুক্তি দেখতে  আসেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সিলিন্ডারের পাশাপাশি ভোলা-বরিশাল পাইপলাইন করা হবে। সেখান থেকে খুলনায় গ্যাস সরবরাহ করার প্রাক-সমীক্ষা চলছে।

তিনি বলেন, ভোলা-বরিশাল পাইপলাইন করতে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা লাগবে। পাইপলাইনের টাকা সরকার দেয় তাই কেউ সেটা হিসেব করে না। জমির দাম পাইপের দাম কেউ বিবেচনায় নেয় না। শুধু গ্যাসের দাম হিসেব করা হয়। পাইপের দাম বিবেচনা করলে এই দাম খুব বেশি না।

ভোলার প্রাকৃতিক গ্যাস সিএনজি করে ঢাকায় শিল্পে দেওয়া শুরু। ছবি: এনার্জি বাংলা

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব নুরুল আলম কার্যক্রম উদ্বোধন করে বলেন, দৈনিক ৫ এমএমসিএফ খুব বেশি নয়। তবে কেবল শুরু, আরও বাড়াতে হবে। এলএনজি যেভাবে বড় বড় জাহাজে করে আসে, সেভাবে নিয়ে আতে হবে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, আমাদের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মত। আর সরবরাহ হচ্ছে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে। এর মধ্যে দেশীয় থেকে আসছে ২১০০ মিলিয়নের মত, আমদানি হচ্ছে কম-বেশি ৮০০ মিলিয়ন। চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকায় কিছু এলাকায়, বিশেষ করে সরবরাহ লাইনের শেষ প্রান্তের গ্রাহকদের গ্যাসের মারাত্মক স্বল্পচাপ বিরাজ করে। ভোলার গ্যাসকে সিএনজি আকারে নিয়ে এসে এসব গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করা হবে। আমাদের দেশের অন্যান্য বেসরকারি কোম্পানিগুলোও যেন এ বিষয়ে এগিয়ে আসে।

তিনি বলেন, বর্ডার পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে গ্যাস আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের অনুমতি পেলে শিগগিরই চুক্তি করা হবে। পাশাপাশি দেশের মধ্যে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রথমে আসবে ৫ মিলিয়ন এবং পরে আরও ২০ মিলিয়ন। ২০২৪ সালের অক্টোবরের মধ্যে আরও ২০ মিলিয়ন আসার কথা। ভোলা এলাকায় আরও পাঁচটি কূপ খনন করা হচ্ছে, ২০২৬-২৮ এর মহাপরিকল্পনায় আরও কূপ খনন করা হবে। তাতে উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়ে যাবে।

ইন্ট্রাকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রিয়াদ আলী বলেন,  আপাতত দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে ৩০ থেকে ৩২টি ট্রাক বা ট্রেইলারের প্রয়োজন হবে। তিন হাজার পিএসআই চাপে এসব গ্যাস সিএনজি আকারে সিলিন্ডারে থাকলেও গ্রাহককে দেওয়ার সময় ১৫ পিএসআই এ।

অনুষ্ঠানে ইন্ট্রাকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এইচএম হাকিম আলীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।