মজুদ বেশি হয়েও গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা কম দেশি কোম্পানিগুলোর

রফিকুল বাসার:

ধারাবাহিকভাবে দেশে বিদেশি কোম্পানির গ্যাস উৎপাদন বাড়লেও কমেছে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর। শুধু উৎপাদন কমছে তাই-ই নয়। মজুদ বেশি থাকার পরও উৎপাদন ক্ষমতা কম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাযথ উদ্যোগ এবং বিনিয়োগের অভাবে দেশীয় কোম্পানিগুলোর গ্যাস উৎপাদন দিন দিন কমছে। আর যথাযথ বিনিয়োগ না করায় উৎপাদন ক্ষমতা কম। এতে গ্যাসের জন্য খরচ বেশি করতে হচ্ছে।

পেট্রোবাংলার দেয়া তথ্য অনুযায়ি, রাষ্ট্রীয় কোম্পানি পরিচালিত তিতাস গ্যাসক্ষেত্রে ১লা জানুয়ারি ২০২১ সালে মজুদ এক হাজার ৪৩৬ দশমিক ৫৪ বিসিএফ। এই গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৫৪২ মিলিয়ন ঘনফুট। আর বিদেশী কোম্পানি শেভরণ পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের মজুদ এক হাজার ২২৬ দশমিক ৭০০ বিসিএফ। কিন্তু উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। মজুদ বেশি হয়েও উৎপাদন ক্ষমতা অর্ধেকের চেয়েও কম দেশি কোম্পানি পরিচালিত গ্যাস ক্ষেত্রে।

বাঙ্গুরা গ্যাস ক্ষেত্র পরিচালনা করে বিদেশী কোম্পানি তাল্লো। সেখানে মজুদ ২২৫ দশমিক ০২৭বিসিএফ। বাঙ্গুরায় উৎপাদন ক্ষমতা ১০৩ মিলিয়ন ঘনফুট।

অথচ রাষ্ট্রীয় এই পরিমান মজুদেও প্রত্যেক ক্ষেত্রেই উৎপাদন ক্ষমতা এর চেয়ে অনেক কম।

রাষ্ট্রীয় কোম্পানি পরিচালিত ফেঞ্জুগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রের মজুদ ২১৮ দশমিক ৩০বিসিএফ। কিন্তু দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ২৬ মিলিয়ন ঘনফুট। বাখরাবাদেও মজুদ ৩৭৬ দশমিক ৩৬ বিসিএফ, আর উৎপাদন ক্ষমতা ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট। কৈলাশটিলার মজুদ দুই হাজার ২৬ দশমিক ৩২ বিসিএফ, উৎপাদন ক্ষমতা ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট। রশিদপুরের মজুদ এক হাজার ৭৭৩ দশমিক ৫২বিসিএফ, উৎপাদন ক্ষমতা ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট। সেমুতাংয়ের মজুদ ৩০৪ দশমিক১৯ বিসিএফ, উৎপাদনক্ষমতা মাত্র ৩ মিলিয়ন ঘনফুট।

সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে যথেষ্ট অর্থ থাকার পরও দেশীয় গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অর্থেও অভাবে এটা হয়নি তা বলা যাবে না। মজুদ আছে জানার পরও সেসব জায়গাতে বিনিয়োগ করা হয়নি। এটা সিদ্ধান্তহীনতার কারণেই হয়েছে। তিনি বলেন, এই কম-বেশিরকারিগরি গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নেই পেট্রোবাংলার কাছে।

দেশীয় কোম্পানি পরিচালিত গ্যাসক্ষেত্রর কূপগুলো জরিপের জন্য ২০১১ সালে বিদেশী পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। তারা তখন উৎপাদনে থাকা ৫৯ এবং না থাকা কিছু গ্যাস কুপ মূল্যায়ন করে। তাদের সুপারিশে বলা হয়, ১২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করলে ৪০ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট বাড়তি গ্যাস উৎপাদন সম্ভব। মজুদ আছে জানার পরও তা করা হয়নি।

এক বছরের ব্যবধানে দেশীয় কোম্পানির গ্যাস উৎপাদন কমেছে প্রায় ৫৬ কোটি ঘনমিটার। আর একই সময়ে বিদেশি কোম্পানির উৎপাদন বেড়েছে ৬৮ কোটি ঘনমিটার। অথচ প্রমাণিত গ্যাসের মোট মজুদ বেশি দেশীয় কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে।

রাষ্ট্রীয় কোম্পানি পরিচালিত তিতাস গ্যাসক্ষেত্রে ১লা জানুয়ারি ২০২১ সালে মজুদ এক হাজার ৪৩৬ দশমিক ৫৪বিসিএফ। এই গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৫৪২ মিলিয়ন ঘনফুট। আর বিদেশী কোম্পানি শেভরণ পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের মজুদ এক হাজার ২২৬ দশমিক ৭০০ বিসিএফ। কিন্তু উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। মজুদ বেশি হয়েও উৎপাদন ক্ষমতা অর্ধেকের চেয়েও কম দেশি কোম্পানি পরিচালিত গ্যাস ক্ষেত্রে।

পেট্রোবাংলার দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

চলতি অর্থবছরও গ্যাস উৎপাদন কমার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। গত ছয়মাসের উৎপাদন পর্যালোচনায় এমনই কথা বলছে পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলার প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে গেল দুইবছর থেকেও উৎপাদন কমবে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশীয় কোম্পানি ৯২৪ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদন করেছে। আর এরপরের বছর এই উৎপাদনকমে দাঁড়িয়েছে ৮৬৮ কোটি ৬৯ লাখ ৯০ হাজার ঘনমিটারে। দেশীয় তিনটি কোম্পানিরই গ্যাস উৎপাদন কমেছে।

বাপেক্স ২০১৯-২০ অর্থবছওে উৎপাদন করেছে ১০ কোটি ৮৪ লাখ ৩০ হাজার ঘনমিটার। পরের বছর কমে হয়েছে ১০০ কোটি ৪১ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার। বিজিএফসিএল ২০১৯-২০ অর্থবছরে করেছে ৭০২ কোটি ৮৪ লাখ ঘনমিটার। আর এরপরের বছর করেছে ৬৬৮ কোটি ৭৩ লাখ ৬০ হাজার ঘনমিটার।

দেশীয় কোম্পানীগুলোর গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে ১ হাজার ১৪৫ এমএমসিএফডি। অথচ উৎপাদন হয় ৮৪১ এমএমসিএফডি। ৩০৩.৬ ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ কম উৎপাদন।

বিদেশী কোম্পনীগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৭৬০ এমএমসিএফডি। উৎপাদন হয় গড়ে ২ হাজার ২৮৬ এমএমসিএফডি।

ক্ষমতার তুলনায় ১৪ দশমকি৪১ শতাংশ কম উৎপাদন হয়।

 

 

মজুদ বেশি হয়েও দেশি কোম্পানির উৎপাদন ক্ষমতা কম হওয়ার ছক:

মজুদ(বিসিএফ) উৎপাদন ক্ষমতা   (মিলিয়নঘনফুট)

দেশি

তিতাস  ১৪৩৬.৫৪ ।          ৫৪২

ফেঞ্জুগঞ্জ   ২১৮.৩০।       ২৬

বাখরাবাদ।  ৩৭৬.৩৬।     ৪৩

কৈলাশটিলা   ২০২৬.৩২।   ৫৫

রশিদপুর  ১৭৭৩.৫২।    ৫৫

সেমুতাং    ৩০৪.১৯।     ৩

বিদেশী

বিবিয়ানা  ১২২৬.৭০০।   ১২০০

বাঙ্গুরা      ২২৫.০২৭।      ১০৩