মহাবিপর্যয়ের একবছর : সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি এখনও

বিদ্যুৎ বিপর্যয় রোধে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু তার বেশিরভাগই হয়নি। কারিগরি সমস্যা সমাধান করতে যে সুপারিশ করা হয়েছিল তার কোনটাই হয়নি। ব্যবস্থাপনা বা নিয়ন্ত্রনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে।

একবছর আগের ঘটনা। গতবছর এই দিনে ১ নভেম্বর ২০১৪, সারাদেশে একযোগে বিদ্যুৎ মহাবিপর্যয় হয়। টানা প্রায় ১২ ঘন্টা দেশের কোথাও বিদ্যুৎ ছিল না। সারাদেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রায় তিনদিন লেগেছিল। জানা যায়নি কোথা থেকে সেদিন সমস্যার উৎপত্তি হয়েছিল।

ভয়াবহ সেই বিপর্যয়ের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কারণ ও ভবিষ্যৎ মোকাবেলায় করণীয় ঠিক করতে। ভবিষ্যতে এমন ঝুঁকি মোকাবেলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটি। সুপারিশে স্বল্প মেয়াদে তিন মাসের মধ্যে কিছু কিছু বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবিষয়ে বলেন, বিদ্যুতের গ্রিডকে ঢেলে সাজানো হবে। পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের বিস্তারিত প্রতিবেদন পেলেই এই কাজ শুরু করা হবে। এজন্য আরও দুই বছর সময় লাগবে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র জানায়, বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিদিন প্রতিক্ষণের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সংশ্লিষ্টদের জানানো হচ্ছে। সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সকল নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা হয়েছে।

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটিআরপিকে গ্রিড পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেয়ার কাজ দেয়া হয়েছে। বিটিআরপি পর্যালোচনা করছে বলে জানা গেছে।

সে সময় কমিটি তিন মাসের মধ্যে ২২টি কাজ করার সুপারিশ করেছিল। এরমধ্যে অন্যতম ছিল ৩৩ কেভি এর পাশাপাশি ১৩২ কেভি ফিডারেও আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সি রিলে স্থাপন করা। কিন্তু তা করা হয়নি। খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে গেলে গ্রিড বিকল হয়ে যায়। এজন্য যৌক্তিক পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ সয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারের মধ্যে পুরোপুরি সয়ংক্রিয় ব্যবস্থা এখনও করা হয়নি। অনেক কেন্দ্র আছে সয়ংক্রিয় পদ্ধতির আওতায়। আবার অনেক কেন্দ্র আছে সনাতন পদ্ধতিতে অর্থাৎ টেলিফোনের মাধ্যমে করা হয়।

বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য জাতীয় লোডডেসপাচ সেন্টারে (এলএনডিসি) সার্বক্ষণিক একজন নির্বাহী প্রকৌশলী থাকার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু এই পরিবর্তন আনা হয়নি। গ্রিড ব্যবস্থাকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করার কথা ছিল, করা হয়নি।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ, আরপিসিএল (ময়মনসিংহ), শাহজীবাজার, সিলেট, বাঘাবাড়ি, রংপুর, সৈয়দপুর, ভেড়ামারা ও বরিশাল গ্যাস টারবাইন মেশিনগুলোতে গ্রিড বিপর্যয় হলেও পরে সয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়। কিন্তু বিপর্যয়ের দিন তা হয়নি।