মহেশখালিতে কয়লা টার্মিনাল করতে ছয় মাসে জরিপ

ছয় মাসের মধ্যে কোল টার্মিনালের সম্ভাব্যতা জরিপ শেষ করতে উন্নয়ন সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সিকে (জাইকা) অনুরোধ জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। একইসঙ্গে মহেশখালীতে নগরায়নের জন্য একটি মাষ্টার প্লান প্রণয়ন করে দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল বুধবার মহেশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লা খালাসের জন্য টার্মিনালসহ সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য নগরায়নের বিষয়ে জাইকার সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ অনুরোধ জানানো হয়। বৈঠকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম ছাড়াও বিদ্যুৎ বিভাগ এবং কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার জাইকার ঋণে মহেশখালীতে বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং কয়লা খালাসের জন্য কোল টার্মিনাল স্থাপনের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়।
বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল এবং কয়লা খালাসের জন্য বন্দর নির্মাণ করায় মহেশখালী অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সঙ্গতকারণে সেখানে অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন চায় না সরকার। এজন্য একটি মাষ্টার প্লান করা হবে। এই পরিকল্পনার বাইরে সেখানে কোন কার্যক্রম চালানো যাবে না।
জাইকার প্রতিনিধিরা বলছেন, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে মহেশখালীর নগরায়নের জন্য মাষ্টার প্লান প্রণয়নের কাজ শুরু করবে তারা। ছয় মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে।
বিদ্যুত্ বিভাগ বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বাধুনিক কোল টার্মিনাল হবে মহেশখালিতে। কয়লা খালাসে বন্দর নির্মাণ, সঞ্চালন লাইন ও সেতুসহ অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন ও টাউনশিপ গঠন করা হবে। মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে জাইকা দেবে মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮৫ শতাংশ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন করা হবে। ২০২২ সালে প্রকল্প থেকে উত্পাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে আশা করছে সরকার।
গতকালের বৈঠকে কোল টার্মিনাল নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে জাইকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি ২৪০ মিটার দীর্ঘ জাহাজে কয়লা আনা হবে, যার ধারণ ক্ষমতা ৮০ হাজার মেট্রিক টন। এজন্য সমুদ্রে ১৩ মিটার পানির গভীরতা থাকতে হবে। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জন্য বছরে ৫৩ বার কয়লা আনার প্রয়োজন হবে। জাইকার পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। হিসাব মতে প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদনে দৈনিক আট টন কয়লা প্রয়োজন হয়। ওই হিসেবে টার্মিনালটি সাত হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লার যোগান দিতে পারবে। টার্মিনালটি শুধু মাতারবাড়ি নয় এখানের পরিকল্পনায় থাকা অন্য কেন্দ্রগুলোর কয়লাও খালাস করবে।
সরকার কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য জাইকা ছাড়াও চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় অন্তত ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা কয়লা দিয়ে উত্পাদন করা হবে। এরমধ্যে মহেশখালী এলাকায় প্রায় ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন কেন্দ্র হবে।