মহেশখালীর বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আস্থা রাখতে পারছে না এলাকাবাসী
মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকার মানুষ ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছে।সরকারের তরফ থেকে আশ্বাস দিলেও জমি অধিগ্রহণের পর ন্যায্য টাকা পাওয়ার বিষয়ে আস্থা রাখতে পারছে না তারা।এছাড়া পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টিও সরকারকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
২০২১ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যেই এ এলাকায় প্রায় নয় হাজার মেগাওয়াট উত্পাদন ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্কপ্পনা করা হয়েছে।এ জন্য প্রায় ছয় হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।প্রথম পর্যায়ের এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রাথমিক সমীক্ষা শুরু হয়েছে।জমি অধিগ্রহণের জন্য স্থানীয়দের তিন বার নোটিশও দেয়া হয়েছে।
শনিবার মাতারবাড়ী ও মহেশখালীতে সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বললে তারা এই আশংকার কথা জানান।এলাকাবাসী বলছেন, এখানে লবন চাষ আর চিংড়ি চাষ করেই তাদের জীবন জীবিকা চলছে।চাষ বন্ধ হয়ে গেলে শ্রম বিক্রির জায়গা বন্ধ হয়ে যাবে।তারা বেকার হয়ে পড়বেন।এছাড়া জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ন্যায্য টাকা দেয়া হবে না বলেও তাদের আশংকা।
সরকার মাতারবাড়ীর যে এলাকায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চায় তার পাশেই ধলঘাটা ও মাতারবাড়ী ইউনিয়নে প্রায় এক লাখ লোক বসবাস করে।সেখানে কৃষকরা জমিতে মূলত লবন চাষ ও চিংড়ি চাষ করে।ঐ এলাকার মানুষের প্রধান আয়ের উত্স লবন এবং চিংড়ি চাষ।
স্থানীয় কৃষক আলী হোসেন, আজাদ, রফিকসহ অনেকে বলেন, সরকার এ জমি অধিগ্রহণ করলে তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।যদি শেষ পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করেও তবে তারা ন্যায্য টাকা পাবো কিনা তার নিশ্চয়তা নেই।
মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রতিরোধ কমিটির সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, সরাসরি এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান নয়।সরকার যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে তা ধলঘাটা ইউনিয়ন ও মাতারবাড়ী ইউনিয়নের মাঝামাঝি অবস্থান।বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি মাতারবাড়ী ইউনিয়ন থেকে আরো দক্ষিণে চর এলাকার দিকে করা হোক।যাতে লোকালয়ের মানুষের কোন ক্ষতি না হয়।
শনিবার মহেশখালী ও মাতারবাড়ী প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেন বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
ঘুরে দেখার সময় এলাকাবাসী এ বিষয়ে তাদের ক্ষোভের কথা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে জানান।কেউ কেউ চিত্কার করেও প্রতিবাদ করতে থাকেন।এ অবস্থায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এলাকাবাসীর উদ্দেশে বলেন, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সরকার কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে না।যারা এই প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাদেরকে পুর্নবাসন করার গ্যারান্টি দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার।যা করছে জনগণের জন্যই করছে।তিনি পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানান।তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি এলাকা ঘুরে এলাকাবাসীর দাবি শুনে গেলেন।পরবর্তীকালে তিনি আবার আসবেন।
স্থানীয় এমপি আশিক উল্লাহ রফিক বলেন, কৃষকদের জমি কম মূল্য ধরে অধিগ্রহণ করা হবে না।লবন ও চিংড়িকে শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য কৃষকদের দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎসচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, জমি অধিগ্রহণ হলে কৃষকরা যাতে তাদের ন্যায্য হিসেব বুঝে পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলে এই এলাকার চেহারা পাল্টে যাবে।নতুন প্রজন্মকে তাদের আদি পেশার উপর নির্ভর করতে হবে না।তারা চাকরি পাবে।এখন তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।তারা আদি পেশায় থাকবে না-কি জীবনকে উন্নত করে গড়ে তুলবে।