মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে নিম্ন দরদাতা মারুবিনি
মাতারবাড়ি বিদ্যুত্ প্রকল্পে দরপ্রস্তাব জমা দেওয়া দুই জাপানি কোম্পানিকেই কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচনা করা হয়েছে। সুমিতমো কর্পোরেশন প্রায় চার দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার ও মারুবিনি কর্পোরেশন তিন দশমিক নয় বিলিয়ন ডলারে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রটি নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বুধবার এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নির্মিতব্য বিদ্যুেকন্দ্রটির তত্ত্বাবধায়ক ও মালিক কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (সিপিজিসিবিএল) দরপ্রস্তাব খোলে। দরপত্র মূল্যায়নে গঠিত কারিগরি কমিটির একাধিক সদস্য জানান, সুমিতমো’র চেয়ে মারুবিনির আর্থিক খরচের প্রাক্কলন কম। সুমিতমোর সঙ্গে আছে জাপানেরই তোশিবা ও আইএইচআই কর্পোরেশন। আর মারুবিনির সঙ্গে আছে একই দেশের মিতশুবিশি ও টোয়া কর্পোরেশন।
জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার ঋণে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ করা হবে। কেন্দ্রটি আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলবে। গত জুলাইয়ের গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর এই প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছিল। ওই সন্ত্রাসী হামলায় জাপানি নাগরিক নিহতের পর জাপানি ঠিকাদাররা এদেশে আসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত আপত্তি জানায়। পরবর্তীতে জাপানি কোম্পানিগুলোর আগ্রহে প্রস্তাব জমা দেওয়ার সময় তিন দফায় সময় বাড়িয়ে গত ৩১ জানুয়ারি শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়। সরকার জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর মাধ্যমেও নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের আশ্বাসে কোম্পানিগুলো শেষদিন (৩১ জানুয়ারি) দরপ্রস্তা জমা দেয়। তারা পৃথক খামে কারিগরি এবং আর্থিক প্রস্তাব জমা দেয়। কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচিত হওয়ায় গতকাল উভয় কোম্পানির আর্থিক প্রস্তাব খোলা হয়। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (সিপিজিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম জানান, এখন তারা আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন করবেন। এরপর যোগ্য কোম্পানিকে আগামী মে’র মধ্যেই কার্যাদেশ দিতে চান। আগস্টের মধ্যে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, সুমিতমো’র অন্যতম অংশীদার তোশিবা বিদ্যুেকন্দ্রের প্রধান যন্ত্রপাতি প্রস্তুত ও সরবরাহ করবে বলে দর প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তোশিবা গত বছর চারশ’ ৯৯ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন আর্থিক লোকসান গুণেছে। চলতি বছর তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৯০ বিলিয়ন ইয়েন হতে পারে। জাইকার ঋণ প্রদানের অন্যতম শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে দরপত্র দাতাদের যথেষ্ট আর্থিক সচ্ছলতা থাকতে হবে। বিদ্যুেকন্দ্রের প্রধান যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারী যদি আর্থিকভাবে লোকসানে থাকে তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। কারণ ঠিকাদারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে সিদ্ধিরগঞ্জে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানির (ইজিসিবি) ৩৩৫ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির কাজ গত সাড়ে চার বছরও শেষ হয়নি। স্পেনের আইসোলাক্স এই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে ২০১২ সালে ইজিসিবির সঙ্গে চুক্তি করে। ২০১৫ সালের মধ্যে বিদ্যুেকন্দ্রটি চালুর কথা ছিল। এরপর কয়েক দফা এই কেন্দ্রের বাণিজ্যিক বিদ্যুত্ উত্পাদন শুরুর তারিখ (সিওডি) পরিবর্তন করা হয়েছ।
মাতারবাড়িতে আমদানি করা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণে জাইকার সহযোগিতায় সেদেশেরই টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার সার্ভিস কোম্পানি ও টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি ২০১৪ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। এর মধ্যে জাইকা দেবে ২৯ হাজার কোটি টাকা। সরকারি তহবিল থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে। অবশিষ্ট দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা বাস্তবায়নকারী সিপিজিসিবিএল দিবে। ২০১৫ সালে এই প্রকল্প একনেকের অনুমোদন লাভ করে।