মেঘনাঘাট পাওয়ার হাব: বিদ্যুৎকেন্দ্র হলেও অনিশ্চিত গ্যাস পাইপলাইন
বিশেষ প্রতিনিধি:
সমন্বয়হীনভাবে চলছে মেঘনাঘাট পাওয়ার হাবের উন্নয়ন। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ যে গতিতে চলছে সে গতি নেই গ্যাস সঞ্চালন লাইনের। বিদ্যুৎকেন্দ্র শেষ হবে ২০২২ সালে। আর এই কেন্দ্র চালাতে যে গ্যাস দেয়া হবে সেই গ্যাস সঞ্চালন লাইন শেষ হবে ২০২৪ সালে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এখনই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
নারায়ণগঞ্জে মেঘনাঘাট পাওয়ার হাবে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার তিনটে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। এগুলো গ্যাস বা আমদানি করা এলএনজি দিয়ে চলবে। যে গতিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ হচ্ছে গ্যাস সরবরাহের জন্য পাইপলাইন সে গতিতে হচ্ছে না। আর তাই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে কেন্দ্র স্থাপন করা হলেও তা চালু করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে। কারণ পাইপলাইন শেষ না হলে গ্যাস সরবরাহ সম্ভব নয়। আর গ্যাস সরবরাহ না হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রও চালু করা যাবে না।
রিলায়েন্স ৭১৮ মেগাওয়াট এলএনজিভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল, সামিট মেঘনাঘাট-২ ৬০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল এবং ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের মেঘনাঘাট ৫৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে মেঘনাঘাট পাওয়ার হাবে। বড় বড় এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই গ্যাস অথবা এলএনজি দিয়ে চলবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, চুক্তি অনুযায়ি এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ ঠিক করা হয়েছে। সে অনুযায়ি কাজও চলছে।
জিটিসিএল সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের আগে এই পাইপলাইন শেষ করা সম্ভব নয়। তবে জিটিসিএল বলছে দ্রুত কীভাবে গ্যাস সঞ্চালন লাইন করা যায় তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গ্যাস সঞ্চালন লাইন করার কাজ এখনও শুরুই হয়নি। প্রাথমিকভাবে জমি নির্ধারণ করা হলেও তা এখনও পুরোপুরি অধিগ্রহণ করা হয়নি।
মেঘনাঘট পাওয়ার হাবে গ্যাস সরবরাহের জন্য বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করছে জিটিসিএল। ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের ৫০ কিলোমিটার হবে এই পাইপ। এর মধ্যে আছে নয়টি নদী। নদীর তলদেশ দিয়ে গ্যাস পাইপলাইন আনা হবে।
গ্যাস সঞ্চালন লাইন করতে জুন মাসে একনেকে প্রকল্প পাশ হয়েছে।
জিটিসিএল কয়েক ভাগে ভাগ করে দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। তবে তার আগে বিদ্যুৎকেন্দ্র শেষ হলে বিকল্প হিসেবে বর্তমানে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব কি-না তা নিয়ে পর্যালোচনা করার অনুরোধ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ২০২২ সালের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে। আর তখনই গ্যাসের প্রয়োজন হবে।
উৎপাদিত বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য যে সঞ্চালন লাইন তাও এখনও হয়নি। তবে পিজিসিবি বলছে, পায়রা-গোপালগঞ্জ-আমিনবাজার ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন এবং মেঘনাঘাট ৪০০ কেভি সাবস্টেশন এ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর নভেম্বর ২০২২ সাল নাগাদ মেঘনাঘট পাওয়ার হাবের নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। আমিনবাজার ৪০০ কেভি সাবস্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এবং মেঘনাঘাট আমিনবাজার ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন চালু আছে। যা বর্তমানে ২৩০ কেভিতে চার্জ করা আছে। এ অবস্থায় মেঘনাঘাট পাওয়ার হাবে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেলে এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কমিশনিং পাওয়ার প্রয়োজন হলে অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে বিদ্যমান কেরানীগঞ্জ মেঘনাঘাট ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে কমিশনিং বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, সামিট মেঘনাঘাট ১৬ই আগস্ট ২০২২, ইউনিক মেঘনাঘাট ৩০শে নভেম্বর এবং রিলায়েন্সের বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২৩ সালের মার্চ মাসে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে আসার কথা।