মেঘনা ঘাটে রিলায়েন্সের বিদ্যুৎ প্রকল্পে অংশীদার হল জাপানের জেরা
নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ভারতের রিলায়েন্স পাওয়ারের অংশীদার হচ্ছে জাপানি কোম্পানি-জেরা।
এই দুই কোম্পানির অংশীদারিত্ব চুক্তি অনুযায়ী, এ প্রকল্পের ৫১ শতাংশের মালিকানা থাকবে রিলায়েন্সের হাতে। আর জেরার হাতে থাকবে বাকি ৪৯ শতাংশের মালিকানা।
রিলায়েন্স বাংলাদেশ এলএনজি অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড নামে এই জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি ৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ওই কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র (প্রথম পর্যায়) নির্মাণ করবে।
মেঘনাঘাটে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে ভারতীয় কোম্পানি রিলায়েন্সের চুক্তি হওয়ার দুদিন পর আলাদা বিবৃতিতে জেরা ও রিলায়েন্স অংশীদারিত্ব চুক্তিতে পৌঁছানোর কথা জানালো।
এলএনজি ব্যবসায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানি জেরা মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রিলায়েন্স পাওয়ারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মেঘনাঘাটের প্রকল্পটি তারা বাস্তবায়ন করবে। এটা হবে বাংলাদেশের কোনো প্রকল্পে জেরার প্রথম অংশগ্রহণ।
“ধারাবাহিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার আর বিদ্যুতের চাহিদার বিবেচনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে জেরা। এই (মেঘনাঘাটের) প্রকল্পে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জেরা আরও ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজতে চায়, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে।”
জেরার প্রেসিডেন্ট সাতোশি ওনোদা বলেন, “রিলায়েন্স পাওয়ারের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রজেক্টে যুক্ত হতে পেরে আমরা আনন্দিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার কাজে জেরা ভূমিকা রাখতে চায়।”
রিলায়েন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান অনীল আম্বানি এক বিবৃতিতে বলেন, “এই যৌথ মূলধনী প্রকল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও শিল্পোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তা ও পরিবেশ বান্ধব জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। জেরার সঙ্গে অংশীদারিত্বে বাংলাদেশের এই উন্নয়নযজ্ঞে অংশ নিতে পেরে আমরা উচ্ছ্বসিত “
ভারতের বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম বড় কোম্পানি রিলায়েন্স বলছে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে এটাই হবে সবচেয়ে বড় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ। অন্ধ্র প্রদেশের সামালকোটে রিলায়েন্সের বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিশ্বমানের যন্ত্রপাতির একটি মডিউল মেঘনাঘাটে স্থানান্তর করা হবে।
মেঘনাঘাটে এলএনজিভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য গত রোববার ঢাকার বিদ্যুৎ ভবনে বাস্তবায়ন, সরবরাহ ও ক্রয় চুক্তি হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে যুগ্ম সচিব শেখ ফয়েজুল আমিন, পিডিবির সচিব সাইফুল ইসলাম আজাদ, পিজিসিবির সচিব মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আজাদ, তিতাসের সচিব মাহমুদর রব এবং রিলায়েন্স বাংলাদেশ এলএনজি অ্যান্ড পাওয়ারের পক্ষে কোম্পানিটির পরিচালক সমীর কুমার গুপ্ত চুক্তিপত্রে সই করেন।
সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে গ্যাস কিনে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে রিলায়েন্স বাংলাদেশ এলএনজি অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড। এই কেন্দ্র থেকে ২২ বছর পিডিবিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে যুগ্ম সচিব শেখ ফয়েজুল আমিন, পিডিবির সচিব সাইফুল ইসলাম আজাদ, পিজিসিবির সচিব মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আজাদ, তিতাসের সচিব মাহমুদর রব এবং রিলায়েন্স বাংলাদেশ এলএনজি অ্যান্ড পাওয়ারের পক্ষে কোম্পানিটির পরিচালক সমীর কুমার গুপ্ত ওই চুক্তিপত্রে সই করেন।
প্রতি ডলারের বিনিময় হার ৮০ টাকা ধরে তিতাস গ্যাস প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থারমাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) গ্যাস বা এলএনজি সরবরাহ করবে ৭ দশমিক ২৬২৫ ডলার দরে।
আর রিলায়েন্স এ কেন্দ্রে তাদের উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ পিডিবির কাছে বিক্রি করবে ৭ দশমিক ৩১২৩ সেন্ট বা ৫ টাকা ৮৪ পয়সা দরে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী তিন বছরের মধ্যে এই কেন্দ্র উৎপাদনে যাবে এবং উৎপাদিত ৪০০ ভোল্টের বিদ্যুৎ পিজিসিবির মেঘনা ঘাট সাব স্টেশন হয়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
রোববার চুক্তি স্বাক্ষরের সময় এ প্রকল্পে জাপানি অংশীদারিত্বের কথা প্রকাশ না করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রিলায়েন্সের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানির সিংহভাগ অংশীদারিত্ব থাকতে হবে রিলায়েন্সের কাছে। সেটা ঠিক রেখে জাপানের কোম্পানি জেরাকে এ প্রকল্পের বিনিয়োগ সহযোগী হিসাবে রাখছে রিলায়েন্স।”