যথাযথ খরচ হোক উন্নয়ন তহবিলের অর্থ

সম্পাদকীয়:

গ্রাহকের অর্থে জমানো তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে গ্যাস খাতের নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু সে অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই। প্রকল্প বাস্তবায়ন করে লাভ করা শুরু করলেও টাকা ফেরতের উদ্যোগ নেই কোম্পানিগুলোর। তাই সেই টাকা ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এটা একটা ভাল উদ্যোগ।

এখন গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের (জিডিএফ) লাভজনক প্রকল্প থেকে অর্থ ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে বিইআরসি। বিইআরসি বলছে লাভজনক প্রকল্পগুলো থেকে অর্থ ফেরত দিতে হবে। তহবিলের বিধিমালায় অর্থ ফেরত দেওয়ার বিধান আছে।

প্রকল্পের জন্য অর্থ নিয়ে যদি আর তা ফেরত না দেয়, তবে তহবিল খালি হয়ে যাবে। নিজস্ব অর্থে নিজস্ব প্রকল্প বাস্তবায়নের যে উদ্দেশ্যে এই তহবিল গঠন, তা তখন আর বাস্তবায়ন হবে না। তাই লাভজনক প্রকল্প থেকে অর্থ ফেরত বাস্তবায়ন জরুরি।

প্রত্যেক মাসে গ্রাহকরা যে গ্যাস বিল দেন সেখান থেকে একটা অংশ জমা রাখা হয়। জমা রাখার অংশ বাড়তি নেয়া হয়। আইন অনুযায়ি এই অর্থ দিয়ে গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়নে খরচ করার কথা।

পেট্রোবাংলা এই তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে খরচ করেছে।

দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে মোট ১৩ হাজার ৩২০ কোটি টাকা জমা হয়েছে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থে এখন ৩৯টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে বাপেক্সের ২৫টি। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির (বিজিএফসিএল) নয়টি এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির (এসজিএফসিএল) পাঁচটি প্রকল্প।

এইসব প্রকল্পের মধ্যে ২৫টি শেষ হয়েছে। এখানে ৩৪৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাপেক্স, বিজিএফসিএল ও এসজিএফসিএলকে চার হাজার ৯১০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। পাঁচ হাজার ৯১০ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে। এখান থেকে তিন হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।

গ্যাস খাতের উন্নয়নে দাতা সংস্থা এবং সরকারের বার্ষিক বাজেট থেকে বরাদ্দ রাখা হয়। এতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে যথাযসময়ে যথাযথ বিনিয়োগ বাধা পড়ত। প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থের জন্য অপেক্ষা করতে হত।

এ সংকট সমাধানে দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান কাজ জোরদার করতে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি। একই সঙ্গে তেল-গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকা।

এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তহবিলের অর্থ যথার্থ খরচ প্রয়োজন। শুধু প্রকল্পের জন্য অর্থ নেওয়ার পর যদি ফেরত না দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে তহবিল শূন্য হয়ে যাবে। তাই যেসব প্রকল্প লাভজনক সেখান থেকে অর্থ ফেরত আনা উচিৎ হবে। সরকারি কোম্পানিগুলোকেও, যারা এই তহবিল থেকে অর্থ নিয়েছে তাদেরও উচিৎ বিইআরসির উদ্যোগে সহায়তা করা।

সবমিলিয়ে এই তহবিলের টাকা সরাসরি গ্রাহকের টাকা। তার আমানত বিইআরসির কাছে। বিইআরসির উচিত সেই আমানত রক্ষা করা। যথাযথ খরচ হচ্ছে কিনা। নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে কিনাÑ তা তদারকি করা।