যুদ্ধ বন্ধ হোক
সম্পাদকীয়
বছর পার হলো। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের শেষ নেই। এই যুদ্ধ দুই দেশের নয়। গোটা পৃথিবীর। এতে দুএকটি দেশ ছাড়া প্রত্যেকে ক্ষতিগ্রস্থ। এই যুদ্ধ খাদ্য আর জ্বালানি নিয়ে সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ।
আন্তর্জাতিক বাজারে গতবছরের চেয়ে জ্বালানির দাম কিছুটা কমলেও খাদ্যের দাম প্রায় একই আছে। জ্বালানি আর খাদ্যের দামের অস্থিরতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধিতে শ্লথ গতি।
যুদ্ধের মূল সমস্যা তিনটে। খাদ্য, জ্বালানি আর ডলারের বিনিময় হার।
ইউক্রেন অন্যতম খাদ্যভাণ্ডার। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন থেকে কয়েক মাস খাদ্য রপ্তানি হয়নি। এতে খাদ্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে কৃষ্ণসাগর দিয়ে খাদ্য চলাচলের চুক্তি হওয়ার পর দাম কিছুটা কমে। কিন্তু যতটা বেড়েছিল সে তুলনায় কমেছে খুবই কম।
করোনার পর যখন একটু একটু করে জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করছিল তখনই শুরু হয় যুদ্ধ। এতে জ্বালানির দাম আরও বাড়ে। বাড়তেই থাকে। অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি প্রায় ১২৩ ডলারে ওঠে। গত বছর জুনে ছিল এই দাম। তারপর একটু একটু কমছে। এখন ৮০ ডলারের কাছাকাছি চলে এসেছে। ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারিতে ব্যারেল প্রতি দাম ছিল গড়ে ৯০ ডলার।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম দেড় বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে। এজন্য খোলা বাজার থেকে এলএনজি কিনতে আগ্রহী হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সম্প্রতি খোলা বাজার থেকে এলএনজি কিনতে আগ্র্রহ দেখিয়েছে। বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম ৭০ শতাংশের বেশি কমেছে। তবে এই দাম আবার বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্লেষকরা।
বিশ্ব মন্দার কারণে জ্বালানির দাম কমার পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ। পূর্বাভাস অনুযায়ি দাম কমছে ঠিকই। কিন্তু তা কতটা কমবে, বা কতদিন কম থাকবে; স্থিতিশীল হবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই এই দাম কমায় আস্থা রাখছে না আমদানিকারক দেশগুলো।
একবছরে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে ২০ শতাংশ। এজন্যও খরচ বেড়েছে।
একদিকে খাদ্য আর জ্বালানি আমদানি করতে বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে বেড়েছে ডলারের বিনিময় হার। তাই দুদিকের চাপ সামলাতে হচ্ছে উন্নয়নশীল, বিশেষ করে খাদ্য ও জ্বালানি আমদানি নির্ভর দেশগুলোকে। এতে খরচ মেটানো কঠিন হয়ে উঠেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। মূল্যস্ফীতি সব হিসাব বদলে দিয়েছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের গমের উপর আফ্রিকা-এশিয়ার অনেক দেশ নির্ভরশীল। তাই সেসব দেশে খাদ্যের দাম বেড়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। কোন রকম দিন যাপন করতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের।
পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতির হার ৩০ শতাংশের ওপর। জিম্বাবুয়েতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৬০ শতাংশের বেশি। নাইজেরিয়াতে এক বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশে কোনো কোনো খাদ্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশে এমন খুব কম পণ্য আছে যার দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়েনি।
গতবছর ২৪শে ফেব্রুয়ারি এক টেলিভিশন ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে এক ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করার ঘোষণা দেন। তারপর থেকে গোটা পৃথিবী খাদ্য জ্বালানিসহ সব কিছুতে মুল্যস্ফীতি নিয়ে চলছে।
স্বস্তির ঘুম চলে গেছে। বাংলাদেশের মত ঘুরে দাঁড়াতে থাকা দেশগুলোর উন্নয়নে শ্লথ গতি এসেছে। যুদ্ধের খেসারত দিতে হচ্ছে সকলের। এটা কাম্য নয়।
যুদ্ধ বন্ধ হোক। যুদ্ধ বন্ধ করুন। সাধারণ মানুষ শান্তিতে জীবন যাপন করতে দিন। সাধারণ মানুষ শান্তিতে জূবন যাপন করুক এটাই চাওয়া।