রমজানে ১০টা পর্যন্ত খোলা বিপনী বিতান
প্রথম রমজান থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিপনী বিতান খোলা রাখা যাবে। আর ১৫ রমজানের পর যতক্ষণ ক্রেতা থাকবে ততক্ষণ। শ্রম মন্ত্রণালয়ের অনুমোতি থাকলে বিদ্যুৎ বিভাগের এবিষয়ে কোন আপত্তি নেই।
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দোকান মালিক সমিতির বৈঠকের পর বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ কথা জানান। এসময় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম উপস্থিত ছিলেন। বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব-উল আলম, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, পিডিবির চেয়ারম্যান শাহীনুল ইসলাম খান, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এ কাদের কিরণ ও সাধারণ সম্পাদক শাহ্ আলম খন্দকার উপস্থিত ছিলেন।
শ্রম মন্ত্রনালয়ের আদেশ অনুযায়ি রাত ৮টার পর বিপনী বিতান বন্ধ রাখার নিময় আছে। মূলত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এই নিয়ম করা হয়েছিল।
বৈঠক সূত্র জানায়, গতবছর ১৫ রমজানের পর এই বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হয়েছিল। এবার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে বলে রমজান মাসের প্রথম থেকেই দুই ঘন্টা বাড়তি সময় দেয়া হচ্ছে। এ সময়ে বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধে দোকান মালিক সমিতি বিভিন্ন ব্যবস্থা নেবে বলেও বৈঠকে অঙ্গিকার করেন।
রমজানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রমজান মাসে জুম্মার নামাজ, ইফতার, তারাবী ও সেহরীর সময় যেন লোডশেডিং না হয় সে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর এজন্য কারিগরি ত্রুটি না থাকলে সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সচল রাখাতে বলা হয়েছে। এজন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারি কোম্পানিগুলোকে সকল কেন্দ্র সচল রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোকে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় রি-রোলিং মিল, ওয়েল্ডিং মেশিন, ওভেন, আয়রণের দোকান, বেশি বিদ্যুতের চাহিদা আছে এমন অন্য সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। একই সাথে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সকল বিতরণ কোম্পানিকে বিশেষ অভিযান জোরদার করতে বলা হয়েছে।
এবার রমজান মাসে আট হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা হতে পারে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ি উৎপাদন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রমজানে সেহরি ও ইফতার হবে লোডশেডিংমুক্ত। বর্তমানে দেশে কোনো লোডশেডিং নেই। রমজানে সারাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। তবে ওই সময়ে বিদ্যুতের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও পেট্রোল পাম্পে অতিরিক্ত লাইট ব্যবহার পরিহার ও এলইডি লাইট ব্যবহারের আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে সেহরি ও ইফতারের সময় এসি ব্যবহার না করতেও সবার প্রতি অনুরোধ জানান প্রতিমন্ত্রী। নসরুল হামিদ বলেন, এ বছরের শুরুর তিনমাসে বিএনপি-জামাত দেশে যে সন্ত্রাসী কাজ করেছে তাতে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা রমজানে সারামাসে বিপণী বিতাণগুলো রাত আটটার পরেও খোলা রাখতে চায়। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিভাগ অনাপত্তি দিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, তবে প্রতিবছর দেখা যায় রাজধানীসহ সারাদেশে বিপনী বিতানগুলোতে রমজান মাসে বিদ্যুতের যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। গুলশান-বনানীর বিপনী বিতানগুলো অহেতুক বিয়ে বাড়ির মতো সাজানো হয়। সারারাত ধরে এসব মার্কেটে অনাবশ্যক আলোকসজ্জা করা হয়। এতে বিদ্যুতের মারাত্মক অপচয় হয়। এই অপচয় বন্ধে দোকান মালিকদের ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, দিনে যেখানে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ছয় হাজার মেগাওয়াট সেখানে রাতে এ চাহিদা পৌঁছায় আট হাজারে। বিদ্যুতের যথেচ্ছ ব্যবহারও এই অতিরিক্ত চাহিদার কারণ। অপচয় বন্ধে তিনি দোকান মালিকদের এলইডি বাল্ব ব্যবহার, পিক আওয়ারে রি-রোলিং মিল, গার্মেন্টস বন্ধ, বিভিন্ন ব্যাংক এবং সিএনজি স্টেশনগুলোতে অতিরিক্ত আলোকসজ্জা পরিহারের পরামর্শ দেন। দিনের বেলা ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।