রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাবে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বিঘ্নিত
সৈয়দ শুক্কুর আলী, ক্যালগ্যারি, কানাডা থেকে:
বিশ্বে কার্বন নিংসরণ একেবারে শুণ্যের কোঠায় আনতে উন্নত, ধনী দেশগুলোকে আগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। এজন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জরুরি।
কানাডায় অনুষ্ঠিত ২৪তম বিশ্ব পেট্রোলিয়াম কংগ্রেসে (ডব্লিউপিসি) প্রতিনিধিরা এই মত প্রকাশ করেছেন।
কংগ্রেসে এই প্রথম জলবায়ু নিয়ে আলোচনা হয়। তেল উৎপাদনকারি দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
কংগ্রেসে জ্বালানির বৈশ্বিক বাজারের প্রবণতা, বিনিয়োগের সুযোগ, প্রযুক্তির অগ্রগতি, প্রক্রিয়া একীকরণ এবং বাকি জ্বালানি শিল্পকে একত্রিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
বিভিন্ন পর্বে বক্তারা বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে নতুন অনিশ্চয়তা এবং ভিন্ন খাতের প্রতি অগ্রাধিকার জ্বালানি খাতের ক্রান্তিকাল উত্তরণের গতি ও দিক নির্দেশনা মন্থর করবে। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জ্বালানি প্রবাহে ব্যাঘাত সরকারগুলোর জন্য নতুন প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে। এই জ্বালানি জাতীয়তাবাদের একটি এজেন্ডাকে ত্বরান্বিত করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশ ও অঞ্চলগুলো তাদের জ্বালানি সরবরাহ রক্ষা করার উপায় অনুসন্ধান করছে।
ইউরেশিয়ার গ্রুপের জালানি বিষয়ক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাদ আলকাদিরি (২০শে সেপ্টেম্বর) আলোচনায় বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তার অগ্রাধিকারগুলোর ব্যাপারে উৎপাদনকারী ও আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্নমত আছে। আর এই ভিন্নমত বা ‘অনৈক্য’ জলবায়ু পরিবর্তন এবং জ্বালানির পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে ব্যহত করতে পারে।
বিভিন্ন বাজারে জ্বালানি নিরাপত্তার অর্থও ভিন্ন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, গ্যাসোলিন সস্তা। কিন্তু আবার চীন ও ভারতে, জ্বালানি পাওয়া গেলেও বেশ দামি। সৌদি আরবে আবার ভিন্ন। এই প্রারম্ভিক বিষয়গুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করে। এগুলো একে অপরের সাথে বিরোধপূর্ণ। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই সরকার মূলধন বরাদ্দ করে।
তিনি সৌদি আরব এবং অন্যান্য প্রধান তেল উৎপাদকদের উদাহরণ দিয়েছেন, যারা ‘ক্লিন আপ দ্য ব্যারেল’ বা ‘ব্যারেল খালি কর’ দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, উৎপাদনে দক্ষতা বাড়াচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং স্থানীয় সরকারগুলো আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে সরে গিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহের জন্য চাপ দিচ্ছে। এই পার্থক্যগুলো একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- এখান থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বহীনতা আছে।
অর্থদাতাদের বিশেষভাবে ঝুঁকি বিমুখ হওয়া সত্ত্বেও নেতৃত্বের এই শূন্যতা পূরণ করতে হবে। কারণ, জ্বালানির দাম কমানোর জন্য কাক্ষিত উৎপাদন অর্জন করতে এই শিল্পে মূলধন প্রয়োজন।
ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রধান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানিকারক হওয়ার পরিকল্পনা করছে।
ইন্দোনেশিয়ার তেল ও গ্যাস বিষয়ক মহাপরিচালক তুতুকা আরিয়াজাদি বলেন, ইন্দোনেশিয়া আবাদির (আবাদি এলএনজি টার্মিনাল, ইন্দোনেশিয়ায় মাসেলা এলএনজি প্রকল্প নামেও পরিচিত) রপ্তানি প্রকল্প এবং আন্দামান প্রকল্পের মতো সম্ভাব্য নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে এলএনজি খাতকে প্রসারিত করছে।
দেশটিতে প্রচুর গ্যাস মজুর আছে। বিপি ও অন্যান্যরা অনুসন্ধান পরিকল্পনা করছে। সেখানে আরও প্রচুর পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ইন্দোনেশিয়ায় ৬০টির বেশি স্থানে জ্বালানি উৎপাদন বন্টন চুক্তি আছে। যেখানে এখন পর্যন্ত কোনো অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়নি। বিপি’র নেতৃত্বাধীন তাংগুহ সিসিইউএস প্রকল্পটি সবচেয়ে উন্নত। ২০২৬-২০২৭ সালে এখানে প্রথম কূপ খননের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমানো এবং ২০৬০ সালের মধ্যে নিট শূন্যে চলে যাবে বলে আশা করছে।
চার দিনের সম্মেলন শুরু হয়েছে ১৭ই সেপ্টেম্বর।
ডব্লিউপিসি এনার্জি ১৯৩৩ সালে গঠিত হয়। বর্তমানে এটি প্রায় ৬০টি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত। যা বিশ্বব্যাপী তেল ও গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহারের ৯৬ শতাংশের বেশি প্রতিনিধিত্ব করে।
ডব্লিউপিসি এনার্জি হল একটি অ-অ্যাডভোকেসি, অরাজনৈতিক সংস্থা যা যুক্তরাজ্যে দাতব্য মর্যাদা সম্পন্ন এবং জাতিসংঘ থেকে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।