রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাড়েননি মোদীর মন্ত্রীরাই
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রায় ১৩ লক্ষ দেশবাসী রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু খোদ নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য এখনও বহাল তবিয়তে সেই ভর্তুকি উপভোগ করে চলেছেন!
যখন আমজনতা রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ছাড়ছেন, সেই সময়ে কেন্দ্রের মন্ত্রীরা কেন তাতে সাড়া দিচ্ছেন না, তা নিয়ে সরকারের অস্বস্তিও কিছু কম নয়। সে কারণে কত জন মন্ত্রী এখনও ভর্তুকি ছাড়েননি, তার হিসেব সামনে নিয়ে আসতে চাইছে না সরকার। এমনকী, তথ্য জানার অধিকার আইনেও চেপে দেওয়া হচ্ছে সেই পরিসংখ্যান। তবে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এই অস্বস্তির কথা কবুল করে বলেন, ‘‘বারবার বলা সত্ত্বেও এখনও বেশ কিছু মন্ত্রী রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ছাড়েননি। যখন সাধারণ মানুষ এই কাজে এগিয়ে আসছেন, তখন মন্ত্রীরা যদি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারেন, সেটি অস্বস্তিকর। তাঁদের উপর আরও চাপ বাড়ানো দরকার।’’
বস্তুত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট তলব করে জানতে চেয়েছেন, ক’জন মন্ত্রী এখনও ভর্তুকি ছাড়ার আবেদনে সাড়া দেননি। এই বছর জানুয়ারি মাসেই ‘গিভ ইট আপ’ প্রকল্প চালু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের আবেদন, স্বচ্ছল পরিবার যদি রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দেয়, তা হলে সেই অর্থ সরকার এমন পরিবারের পিছনে ব্যয় করবে, যারা এখনও কয়লা, কাঠ পুড়িয়ে ধোয়ার মধ্যে রান্না করেন। গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে রোজ এই নিয়ে ফলাও করে প্রচারও করা হচ্ছে। তাতে সাড়া দিয়ে উত্তরোত্তর ভর্তুকি ছাড়ার পরিমাণও বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত ১২ লক্ষের বেশি মানুষ এই ভর্তুকি ছেড়েছেন, যার ফলে সরকারের কোষাগারে বাড়তি সঞ্চয় হয়েছে প্রায় পাঁচশো কোটি টাকা।
কিন্তু পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক সূত্রের মতে, দেশে প্রায় ১৫ কোটি মানুষ রান্নার গ্যাস ব্যবহার করেন। সেই তুলনায় সংখ্যাটি এখনও নেহাৎ নগণ্য। তবে গ্যাসের সিলিন্ডারের ভর্তুকি ছাড়ার বিষয়টি যেহেতু বাধ্যতামূলক নয়, এটি স্বেচ্ছায় করতে হবে, সেই হিসেবে শুরুর পরিসংখ্যানটি মন্দ নয়। রোজ এই সংখ্যাটি ক্রমশ বাড়ছে। রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি দিতে সরকারের বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বোঝা পড়ে। অতীতে ইউপিএ সরকার এই ভর্তুকির বোঝা কমানোর জন্য পরিবারপিছু ভর্তুকির গ্যাসের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করেছিল। তাতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার। কিন্তু জনমতের চাপে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠতে হয়। এখন বছরে পরিবারপিছু ১২টি করে গ্যাসের সিলিন্ডার নির্ধারিত হয়েছে।
কিন্তু কেন্দ্রের মন্ত্রীরাই যখন এখনও সকলে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ছাড়েননি, তাই সরকার সেটিকে ঢাক পিটিয়ে বলতেও পারছে না। এক বার সব মন্ত্রী ভর্তুকি ছেড়ে দিলে প্রধানমন্ত্রী সেটিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরবেন, যাতে অন্যরাও সেখান থেকে অনুপ্রেরণা পান। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের এক মন্ত্রীর আক্ষেপ, মন্ত্রীরা এক জন সাংসদও তো বটে। তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রেও অনেক দায়বদ্ধতা থাকে। অথচ কেন্দ্রে নতুন সরকার আসার পর থেকে একের পর এক প্রকল্পের ভার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সাংসদদের উপর। তার জন্য বাড়তি অর্থও বরাদ্দ হচ্ছে না। সে গ্রামে শৌচালয় নির্মাণই হোক বা আদর্শ গ্রাম যোজনা। সবই সাংসদ তহবিল থেকে করতে হচ্ছে। তার উপর সাংসদদের মাইনেও বাড়ানো হচ্ছে না। এর সঙ্গে যদি আরও ভর্তুকি ছাড়ার কথা বলা হয়, তা হলে তো সাংসদদের নাভিশ্বাস উঠবে!