রান্নায় গ্যাস সংযোগ বিতর্ক
আবাসিক রান্নার কাজে পাইপের গ্যাস দেয়ার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। আবাসিক রান্নায় নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে গ্রহকের দোরগোড়ায় বাণিজ্যিক জ্বালানি পৌঁছানো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়। এখানে সম্ভাবনাময় কয়েকটি বিষয় আছে, পাইপলাইনে দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস, এলপি গ্যাস, এলএনজি এসে পাইপে করে দেয়া এবং বিদ্যুৎ। এমন ব্যবস্থা করতে হবে যেন বাজার যাচাই করে সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রাহক বেছে নিতে পারে। কিন্তু তা না করে জিম্মি করে সকলকে বাধ্য করা যেন না হয়। এতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি হবে। জ্বালানি সরবরাহে সেবা উন্নত হবে।
২০২১ সালের মধ্যে সকলে বিদ্যুৎ ব্যবহারের আওতায় আসবে। এখনই উদ্বৃত্ব বিদ্যুৎ। ফলে রান্নায় বিদ্যুৎ ব্যবহার হলে তা পরিবেশ বান্ধব হবে। স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হলে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ হবে রান্নায় জ্বালানির প্রধান উৎস। বর্তমানে এবং অদূর ভবিষ্যতে শহরাঞ্চলে আবাসিক রান্নায় পাইপের গ্যাস সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব। বিশেষ করে যে এলাকায় এখনই পাইপ আছে। শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চলে অথবা ছোট শহরে যেখানে সঞ্চালন ও বিতরণ পাইপ নির্মাণ খরচ বেশি সেখানে বোতল গ্যাস তুলনামূলক সাশ্রয়ী হবে।
দীর্ঘদিন পাইপের গ্যাস সংযোগ বন্ধ আছে। বছর দুই আগে সিদ্ধান্ত হয়েছে আর রান্নায় পাইপের গ্যাস দেয়া হবে না। কিন্তু এলএনজি আমদানির সাথে নতুন করে এবিষয়টি আলোচনায় এলো।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. আনিছুর রহমান হঠাৎ জানালেন, আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে। তিনি আবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে একথা বললেন। সিনিয়ন সচিব সাংবাদিকদের বললেন, আবাসিক গ্যাসসংযোগ দিতে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। কী আছে, কী লাগবে, কী দিতে হবে, কী পরিমাণ আবেদন অপেক্ষায় আছে। এরপর আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে যাব। তিনি বলেন, অনেকে কয়েক বছর আগে ডিমান্ড নোট জমা দিয়েছিল, কিছু আছে ডিমান্ড ইস্যু করা হয়েছিল কিন্তু টাকা জমা হয়নি, কিছু আবেদন আছে, কিছু অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করে যাচ্ছে। এই চার ক্যাটাগরিতে কী সংখ্যক আছে, হয়তো ১০ শতাংশ কম বেশি হবে। এই চার ক্যাটাগরিতে সংযোগের ক্ষেত্রে কী পরিমাণ গ্যাস লাগবে, কতজনকে সংযোগ দিতে পারব, কী পরিমাণ গ্যাসের সংস্থান আমাদের আছে। এগুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কিন্তু তারপরেই বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানালেন, রান্নায় গ্যাস সংযোগ দেয়ার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। দুজনের দুরকম কথায় এনিয়ে আলোচনা শুরু।
সচিবের একথায় একদিনের মধ্যেই সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ঠিকাদাররা। সাথে সাথে নতুন সংযোগ দেয়ার জন্য কার্যক্রম শুরু করে দেন তারা। দাবি জানান দ্রুত স্বাভাবিকভাবে গ্যাস সংযোগ দেয়ার। আর এসব সামলাতে বিজ্ঞপ্তি দেয় তিতাস গ্যাস। সেখানে বলেছে, গ্যাস সংযোগ দেয়ার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এজন্য যেন কেউ আর্থিক লেনদেন না করেন। কারো সাথে যেন কোন চুক্তি না করেন।
জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা এসব ঘটনার পর জানান, নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেয়ার পরিকল্পনা, বিবেচনা বা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এমনকি আলোচনাও নয়। তবে এলএনজি আমদানির পর গ্যাসের গড় দাম বেড়ে গেছে। তাই গ্যাস চুরি এবং অপচয় ঠেকাতে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে তিতাস গ্যাস কোম্পানির বিতরণ পাইপলাইন নতুন করে সাজানো হবে।
এখন রান্নায় পাইপের গ্যাস দেয়া বন্ধ আছে। যারা নতুন গ্যাস গ্রাহক হতে ই”ছুক তাদের বোতল গ্যাস ছাড়া বিকল্প নেই। বোতল গ্যাসের দাম বেশি। সাথে ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য এতে আগ্রহ কম। সুযোগ থাকলে বোতল গ্যাস কেউ ব্যবহার করত কিনা সন্দেহ।
বলা হয় সংকটের কারণে এখন আর রান্নায় পাইপের গ্যাস বা দেশের গ্যাস দেয়া হচ্ছে না। আমদানি করা বোতল গ্যাস সবার জন্য উন্মুক্ত।
সিলেট ময়মনসিংহ ঢাকা কুমিল্লা চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস পাইপ লাইন আছে। কিন্তু খুলনা রাজশাহী দিনাজপুর অঞ্চলে কোন পাইপ নেই। খুলনায় গ্যাস পাইপ করার উদ্যোগ অনেক দিনের।
রান্নায় যখন পাইপের গ্যাস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয় তখন এলএনজি আমদানি শুরু হয়নি। এখন দেখা যাচ্ছে সামগ্রীকভাবে যে এলাকায় পাইপ লাইন স্থাপন করা আছে সেখানে এলএনজি এসে রান্নায় গ্যাস দেয়া বোতল গ্যাসের চেয়ে খরচ কম।
ভবিষ্যতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলএনজি আমদানির প্রেক্ষাপটে রান্নায় জ্বালানির বিষয়টি নতুনভাবে বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
২০০৯ সালের ২১শে জুলাই থেকে শিল্প ও বাণিজ্যিকে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করা হয়। এরপর ২০১০ সালের ১৩ই জুলাই থেকে আবাসিকেও নতুন গ্যাস-সংযোগ বন্ধ করা হয়। ২০১৩ সালের ৭ই মে আবাসিকে সংযোগ দেয়া শুরু হলেও কিছুদিন পর তা আবার বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমানে শিল্পে বা ইপিজেড এ অবস্থিত শিল্পে শুধু গ্যাস দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে আছে।
সারাদেশে ছয়টি সরকারি কোম্পানি গ্যাস বিতরণ করে। এগুলো হলো তিতাস, কর্ণফুলী, পশ্চিমাঞ্চল, জালালাবাদ, বাখরাবাদ ও সুন্দরবন। সারাদেশে বৈধ আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন ৩৮ লাখ। তাদের মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নরসিংদী, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জে মোট ২৭ লাখ গ্রাহকের কাছে গ্যাস সরবরাহ করছে তিতাস গ্যাস।
এখনই সময় সাশ্রয়ী নিরাপদ আর পরিবেশ বান্ধব জ্বালানির ব্যবস্থা করা।