পরিবেশের সমীক্ষা যথাযথ হয়েছে: বিদ্যুৎ বিভাগ
রামপাল ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে পরিবেশের বিষয়ে সমীক্ষা যথাযথভাবে করা হয়েছ। সবার্ধুনিক পদ্ধতিতে এ কেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হবে-এতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। এ বিষয়ে
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) অভিযোগ প্রত্যাখান করে গতকাল এক বিবৃতিতে বিদ্যুৎ বিভাগ এ তথ্য জানায়।
গত ১৬ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি রামপাল ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি করা হয়েছে ও পরিবেশগত প্রভাব
সমীক্ষা যথাযথভাবে করা হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ বিবৃতিতে জানায়, গ্যাসের মজুদের পরিমাণের কথা বিবেচনা করে সরকার বিশ্বের অন্য উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মতো বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। আমদানী নির্ভর কয়লা ভিত্তিক এসব প্রকল্পের স্থান নির্ধারণে কয়লা পরিবহন, সবচেয়ে কম জমি ব্যবহার এবং পরিবেশগত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্থান নির্বাচন করে। এগুলো বিবেচনা করে উপকূলবর্তী ২টি স্থান বাগেরহাট জেলার রামপালে এবং কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ীতে নির্ধারণ করা হয়। স্থান নির্বাচনের সময় প্রকল্প এলাকার জনগণের সাথে উম্মুক্ত মতবিনিময় করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকাটি সুন্দরবনের সীমানা হতে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এক্ষেত্রে পরিবেশের উপযোগিতা যাচাইয়ের পর পরিবেশগত সমীক্ষাটি যাচাইয়ের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন করা হয়। প্রকল্প এলাকা হতে মাত্র ১৫০ পরিবারকে পূণর্বাসনের প্রয়োজন হয়। প্রকল্প এলাকায় অধিকাংশ জমিই অকৃষি জমি। প্রকল্প এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রাথমিক ছাড়পত্র
পাওয়ার পরই মাটি ভরাটসহ অন্য উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পশুর নদী হতে রিসাইকেল পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবহার করা হবে যা পশুর নদীর গড়
প্রবাহের ০.০৬%। উত্তোলিত পানি রিসাইকেল করার পর পরিবেশ অধিদপ্তরের বিধিবদ্ধ তাপমাত্রা সীমার মধ্যে আবার পশুর নদীতে ছাড়া হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে অত্যাধুনিক সুপার ক্রিটিক্যাল পদ্ধতিতে করা হবে। ফলে অধিক দক্ষতা সম্পন্ন হবে এবং উন্নত মানের ও কম পরিমাণ কয়লার প্রয়োজন হবে। যা পরিবেশের উপর আদৌ কোন প্রভাব ফেলবে না। স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর উন্নত দেশেও
পরিবেশগত এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয় না। অথচ এ ক্ষেত্রে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও পরিবেশগত বিষয়গুলোর উপর সর্বোচ্চ প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
মাতারবাড়ী প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য জাপান
সরকারের সাথে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্প এলাকায় মাত্র ১৬টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয় এবং বেশিরভাগ জমি অকৃষি জমি। প্রকল্পটির ইআইএ সম্পাদনের জন্য
জাইকা আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে টোকিও ইলেকট্রনিক সার্ভিসেস কোম্পানী লিমিটেডকে নির্বাচন করা হয়। প্রকল্পের জমি সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ নীতিমালা অনুযায়ী অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং
ক্ষতিপূরণ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার কোন ভূমিকা নেই।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, রামপাল ও মাতারবাড়ী প্রকল্পের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে টিআইবি বাজেট হিসেবে রামপালের ক্ষেত্রে দেখিয়েছে ১৪,৫১০ কোটি টাকা এবং মাতারবাড়ীর ক্ষেত্রে ৩৬,০০০ কোটি টাকা। প্রকৃতপক্ষে মাতারবাড়ীর ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ প্রকল্প ছাড়াও বন্দরের চ্যানেল তৈরী, কোল টার্মিনালসহ অন্যান্য স্থাপনার
উন্নয়নের জন্য এই বাজেট। সুতরাং ২টি প্রকল্পের মধ্যে তুলনাযোগ্য নয়।