রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প সরিয়ে নিতে আহ্বান ইউনেস্কোর
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আবার আশঙ্কা করছে ইউনেস্কো। ফলে এই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে ইউনেস্কো যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে সুন্দরবনের কী ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে তা বলা হয়েছে।
তিরিশ পৃষ্ঠার বেশি এই রিপোর্টটি ইউনেস্কো প্রকাশ করেছে মঙ্গলবার। এতে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের মূলত চার ধরনের ক্ষতির আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে কয়লা পুড়িয়ে। এ কয়লা পোড়ানোর পর সেখান থেকে থেকে নির্গত কয়লার ছাইকে সুন্দরবনের পরিবেশের জন্য এক নম্বর হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত বর্জ্য এবং পানিকে দ্বিতীয় হুমকি গণ্য করছে ইউনেস্কো। এই প্রকল্প ঘিরে সুন্দরবন এলাকায় যেভাবে জাহাজ চলাচল বাড়বে এবং ড্রেজিং করার দরকার হবে, সেটিও সুন্দরবনের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর সবশেষে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘিরে ওই অঞ্চলের সার্বিক শিল্পায়ন এবং উন্নয়ন কর্মকা- ও সুন্দরবনের পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলবে বলে মনে করে ইউনেস্কো।
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার এবং ইন্টারন্যাশনাল কনজার্ভেশন ইউনিয়নের (আইইউসিএন) তিনজন বিশেষজ্ঞ সরেজমিনে ঘুরে দেখে এবং বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে এই রিপোর্টটি তৈরি করেছেন। এতে বলা হয়েছে, যেখানে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে, সেটি সুন্দরবনের সীমানা থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এনভায়রনমেন্টাল ইম্প্যাক্ট এসেসমেন্টের (ইআইএ) জন্য আইউসিএন যে নির্দেশনা দিয়েছিল, তা ঠিকমতো মেনে চলা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে এই রিপোর্টে। এছাড়া সুন্দরবনের পরিবেশের জন্য ক্ষতি এড়াতে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে ধরনের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং যেরকম আন্তর্জাতিক মানদ- মেনে চলা উচিত, সেটাও করা হচ্ছে না বলে মন্তব্য করা হয় এই রিপোর্টে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরিয়ে নিন ॥ ইউনেস্কো সুন্দরবনের কাছে এই বিশাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ বন্ধ রাখতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইউনেস্কো বলেছে, এরকম একটি প্রকল্প বাংলাদেশে সুন্দরবনের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করবে।
সুন্দরবনের কাছে রামপালে প্রস্তাবিত এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ উদ্যোগে করা হচ্ছে। এটির উৎপাদন ক্ষমতা হবে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। প্রতি বছর প্রায় পঞ্চাশ লাখ টন কয়লা এটিতে ব্যবহার করা হবে।
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার এবং ইন্টারন্যাশনাল কনজার্ভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন) বলেছে, এমন সম্ভাবনা খুব প্রবল যে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতি করবে। ইউনেস্কো বলেছে, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এমন কোন জায়গায় সরিয়ে নেয়া উচিত, যাতে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি না হয়। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার কথা।