রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রর কাজ পাচ্ছে ভারতের ভেল
রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিনিয়োগ নিশ্চিত হল। ভারতের ভেল এই কেন্দ্র স্থাপন করার কাজ পাচ্ছে। প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে কম দর দিয়েছে তারা। এছাড়া ভারতের এক্সিম ব্যাংক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বাংলাদেশ-ভারত ফেণ্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির (বিআইএফপিডিসিএল) একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সুপার থারমাল ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে তিনটি কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন শেষ পর্যায়ে। তিনটি কোম্পানির মধ্যে অনেক কম দর দিয়েছে ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক কোম্পানি লি. (ভেল)।
২২শে সেপ্টেম্বর এই কেন্দ্র স্থাপনের জন্য দরপ্রস্তাব জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল। সে দিন তিনটি কোম্পানি তাদের প্রস্তাব জমা দেয়। প্রায় তিন মাস তিনটি কোম্পানির সব কিছু পর্যালোচনা করা হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিআইএফপিডিসিএল এর উর্ধ্বতন এক কর্তকর্তা এনার্জি বাংলাকে বলেন, মূল্যায়ন এখনও শেষ হয়নি। এজন্য নির্দিষ্টভাবে দাম বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে ভেল অন্য দুই কোম্পানির চেয়ে অনেক কম দর দিয়েছে। পর্যালোচনা সম্পূর্ণ শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভেলের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। তিনি বলেন, পরিবেশের সব দিক বিবেচনায় নিয়েই এই কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। পরিবেশ সুরক্ষায় কী কী করা হবে তার বিস্তারিত বিবরণ দরপ্রস্তাবে আছে। সেগুলো সব পর্যালোচনা করা হয়েছে।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম সম্প্রতি বলেছেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন শেষ হয়েছে। কোন কোম্পানি কাজ করবে তা চুড়ান্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দরপ্রস্তাব জমা দেয়ার আগেই প্রত্যেক কোম্পানি তাদের নিজেদের দেশের এক্সিম ব্যাংকের সমর্থন নিয়েছে। সে অনুযায়ি ভারতের ভেল কেন্দ্র স্থাপনের কাজ পেলে এতে বিনিয়োগ করতে সেখানের এক্সিম ব্যাংক।
ছয়টি কোম্পনি দরপ্রস্তাবের নথি কিনেছিল। এগুলো হল, জাপানের মারুবিনি করপোরেশন, ভারতের ভেল, চিনের হারবিন ও সিনোম্যাক এবং কোরিয়ার ডেও ইন্টারন্যাশনাল ও দোসান হেভি ইণ্ডাসট্রিজ। এরমধ্যে দুটি কোম্পনি যৌথভাবে এবং একটি এককভাবে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছে। জাপানের ‘মারুবেনি করপোরেশন’ ও ভারতের ‘লারসর এণ্ড টুবরো লিমিটেড’ – এই দুই কোম্পানি যৌথভাবে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছে। চিনের ‘হারবিন ইলেকট্রিক কোস্পানি লি.’ ‘ইটিইআরএন’ ও ফ্রান্সের আলসটম – এই তিন কোম্পানি যৌথভাবে জমা দিয়েছে। আর ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস্ লিমিটেড (ভেল) এককভাবে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছে। মোট ছয়টি কোম্পানি দরপ্রস্তাব কিনলেও তিনটি জমা দেয়।
প্রথমে ১৫ই ফেব্রুয়ারি রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্র জমা দেয়ার শেষদিন ছিল ১৮ মে। পরে তা বাড়িয়ে ১৮ জুলাই করা হয়। পরে আবার আরও দুই মাস সময় বাড়িয়ে ২২ সেপ্টেম্বর করা হয়। দরপ্রস্তাব কেনা কোম্পানিগুলোর অনুরোধেই কয়েকদফা সময় বাড়ানো হয়েছিল।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ করতে হবে চুক্তির ৪১ মাসের মধ্যে। দ্বিতীয় ইউনিট শেষ হবে ৪৬ মাসে। এই হিসেবে কেন্দ্র স্থাপন শেষ হবে ২০১৯ সালের শেষে। রামপাল কেন্দ্রের ৭০ শতাংশ অর্থ ঋণ নেয়া হবে। বাকি ৩০ শতাংশ পিডিবি ও এনটিপিসি যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই কেন্দ্র স্থাপনে আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ২০১ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এর ১৫ শতাংশ হিসাবে ৩০ কোটি ২১ লাখ ৮৪ হাজার ডলার দিতে হবে পিডিবিকে। রামপালে বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণ করতে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কোম্পানি গঠন করা হয়। এর আগে ২০১০ সালে চুক্তি হয়। এখন দরপত্র আহবান করে ঠিকাদার কোম্পানি নির্ধারণ করা হচ্ছে।