রামপাল: ভারতীয় কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ তুলে নিল নরওয়ে
সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত ক্ষতির উদ্বেগের কারণে নির্মাতা কোম্পানি ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেডকে (বিএইচইএল) বিনিয়োগের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে নরওয়ের ওয়েলথ ফান্ড।
শুক্রবার নরওয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক নরজেসের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে এতথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ওই তহবিলের পর্যবেক্ষক পর্ষদের সুপারিশের ভিত্তিতে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন বাংলাদেশে সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে ‘পরিবেশগত মারাত্মক ক্ষতির’ জন্য দায়ী হওয়ার ‘অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকির’ মুখে থাকায় বিএইচইএল বিনিয়োগের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বেশিরভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রকৌশল ও নির্মাণ খাতের ভারতীয় কোম্পানি বিএইচএলের কাছে এবিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই তাপ বিদ্যুেৎ কেন্দ্রে হলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না বলে সরকার আশ্বস্ত করে আসছে।
কিন্তু সরকার রামপাল নিয়ে ‘অসত্য তথ্য’দিচ্ছে অভিযোগ করে ওই প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে ‘সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি’সহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও নাগরিক সংগঠন।
বিএইচইএলের বিষয়ে নরওয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো সুপারিশে ফান্ডটির পর্যবেক্ষক পর্ষদের বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে দুটি প্রধান উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছে; সুন্দরবনের খুব কাছ দিয়ে মালবাহী নৌ চলাচলের সময় পরিবেশগত ক্ষতি ও নৌপথে খননের ফলে স্রোত বেড়ে গিয়ে ক্ষয়ের কারণে অনন্য এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের বিপদাপন্ন হওয়া।
এথিক্স কাউন্সিল নামে ওই পর্ষদ বলছে, বিএইচইএল প্রথমে কাউন্সিলের তদন্তে সাড়া দেয়নি। পরে একটি খসড়া সুপারিশে বলেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে মালবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য সংশ্লিষ্ট নৌপথে খননের কোনো প্রয়োজন নেই।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে অংশগ্রহণের কারণে এর আগে ২০১৪ সালে ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানিকেও (এনটিপিসি) এই ফান্ডের বিনিয়োগের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।
গভর্নমেন্ট পেনসন ফান্ড গ্লোবাল (জিপিএফজি) নামে বিশ্বের বৃহত্তম এই তহবিল নরওয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তহবিল পরিচালনা করে। নরওয়ের সংসদ নির্ধারিত নির্দিষ্ট কিছু বিধিমালা ভঙ্গকারী কোনো কোম্পানিতে এই তহবিল বিনিয়োগ করতে পারে না। নিষিদ্ধ তালিকায় পরমাণু অস্ত্র, তামাক, অ্যান্টি-পারসোনেল ল্যান্ডমাইন উৎপাদনকারী কোম্পানি।
২০১৫ সালের শেষে ৯৩৫ বিলিয়ন ডলারের এই ফান্ডের হাতে ভারতীয় কোম্পানি বিএইচএলের দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, যার আর্থিক পরিমাণ এক কোটি ৩১ লাখ ডলারের বেশি।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই শেয়ারগুলো বিক্রি করে দিয়েছে জিপিএফজি। তবে বাজারে যাতে অস্থিরতা তৈরি না সেজন্য ধীরে ধীরে বিক্রি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।