সংসদীয় কমিটিতে পরিবেশবিদ: রামপাল নয় সুন্দরবন রক্ষা নীতিমালা কর
রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র না করে সুন্দরবন রক্ষা নীতিমালা করার দাবি জানিয়েছে পরিবেশবিদরা। রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা নিয়ে আলোচনায় বসে ছিল বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। আলেছনায় পরিবেশবিদদের আমন্ত্রন জানানো হয়। সেখানে তারা এই দাবি উপস্থাপন করে বলে জানা গেছে।
আজ বৃহষ্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে কমিটির ২৩ তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আগের মতই পরিবেশবিদরা এই কেন্দ্র না করার অনুরোধ করে। আর বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংশ্লিষ্ঠরা তাদের পক্ষে নানা যুক্তি উপস্থাপন করেন।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ক্ষতি নিশ্চিত। তাই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করে সুন্দরবন রক্ষা নীতিমালা করতে হবে।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন, বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জল কান্তি ভট্টাচার্য, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরুল ইমাম, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান. সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির শরীফ জামিল উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশবিদরা বলেন, রামপাল বিদ্য্যুৎকেন্দ্র করতে এখনই যে কার্যক্রম চলছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। যথাযথ নিয়ম মেনে জমি অধিগ্রহন হয়নি। এখনই অনেক সমস্যা, ভবিষ্যতে আরও অনেক সমস্যা হবে। সুন্দরবন, সুন্দরবনই।এর কোনো বিকল্প নেই। এ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হবেই। এজন্য এই প্রকল্প বাতিল করতে হবে। অন্য স্থানে সরিয়ে নিতে হবে।
আনু মুহম্মদ বলেন, সুন্দরবনের ক্ষতি করে এমন কোনো কিছুই করা যাবে না। সুন্দরবন রক্ষায় নীতিমালা করতে হবে। এই নীতিমালার মাধ্যমে সুন্দরবন বিনাসী তৎপরতা বন্ধ করা হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ আমাদের উন্নয়নের জন্য দরকার। কিন্তু তা সুন্দরবনের বিনিময়ে হতে পারে না। বিদ্যুৎকেন্দ্র করার অনেক জায়গা পাওয়া যাবে। বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে সেসব জায়গায় বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যেতে পারে। বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান। আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার বার বার বিদেশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদাহরণ দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের নদীগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় সেখানে পরিবেশের কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। এই অবস্থায় সরকার কি করে দাবি করে যে তারা সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না।
শামসুল আলম বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে যে পরিবেশের সমীক্ষা করা হয়েছে তা সঠিকভাবে করা হয়নি। এই কেন্দ্রের কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যেসব প্রভাব পড়বে তা যাচাই না করেই এই সমীক্ষা প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে তার বেশিরভাগই কোনো বিশেষজ্ঞের বক্তব্য না। কর্মকর্তাদের বক্তব্য। তিনি বলেন, শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে যে শিল্পায়ন গড়ে উঠবে তার কারণেও সুন্দরবনের অনেক ক্ষতি হবে। এখনই জমি কেনা শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া কয়লা পরিবহন নিয়ে সরকার বার বার নানা যুক্তি দিলেও বাস্তবে এ বিষয়ে কোনো সমীক্ষা করা হয়নি।
এদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে স্বচ্ছভাবে সব কাজ করা হয়েছে। সুন্দরবন রক্ষা করেই সব কাজ করা হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় রামপালই সব থেকে উত্তম জায়গা।
রামপালে অধ্যাধুনিক কেন্দ্র করা হবে। বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে। এতে সুন্দরবনের পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।
নসরুল হামিদ বলেন, পরিবেশবিদরা সুন্দরবনের ক্ষতির আশংকা করছেন কিন্তু আমরা বলছি কোনো ক্ষতি হবে না। পরিবেশের কোন ক্ষতি না করেই উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।