রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে

শনিবার থেকে রাশিয়ার উত্তরে আর্কটিক মহাসাগরে যৌথ অনুসন্ধান কাজ শুরু করেছে এক্সন মবিল ও রোজনেফট। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় জ্বালানি কোম্পানিটিকে ৭০ কোটি ডলারের এ প্রকল্প থেকে বিরত রাখতে না পারায় ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর আরোপিত ইইউ-মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। খবর ব্লুমবার্গ ও সিনহুয়া।

ইউক্রেন ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় নেমে আসে। চার মাসের ব্যবধানে রাশিয়ার ওপর তিন দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। তৃতীয় দফায় আর্থিক ও প্রতিরক্ষা খাতের পাশাপাশি সমুদ্রে তেল-গ্যাস উত্তোলনে ব্যবহূত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি রফতানিকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়।

কিন্তু এক্সন মবিলের পরিকল্পনায় আইনত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা। কারণ দুই বছর আগেই তেল অনুসন্ধানের জন্য আর্কটিক মহাসাগরে রিগ ভাড়া নিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি রোজনেফটের সঙ্গে চুক্তি করে কোম্পানিটি।

আর্কটিক মহাসাগরে তেল অনুসন্ধান ও সেখান থেকে উত্তোলন বাড়ানো রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির মোট রাজস্বের অর্ধেকই আসে জ্বালানি থেকে। বর্তমান প্রতিকূল সময়ে এ রাজস্ব বাড়াতে দৈনিক তেল উত্তোলন সর্বোচ্চ ১ কোটি ব্যারেলের কাছাকাছি রাখতে হবে তাদের। অন্যদিকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে এক্সনের তেল উত্তোলন পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। আবিষ্কৃত নতুন কূপ প্রতিষ্ঠানটির জন্য অপরিশোধিত তেলের একটি বড় উত্স হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অক্সফোর্ড ইনস্টিটিউট অব এনার্জি স্টাডিজের গবেষক জেমস হেন্ডারসনের মতে, ‘এ কূপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত অনেক বছরের মধ্যে বৈশ্বিক জ্বালানি শিল্পের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কূপগুলোর একটি এটি।’

শুক্রবার ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, দুই বছরেরও বেশি সময়ের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি শেষে আর্কটিক মহাসাগরে রাশিয়ার সবচেয়ে উত্তর অংশে পরিকল্পিত ইউনিভার্সিতেতস্কায়া প্রকল্পটির উদ্বোধন হচ্ছে।

শনিবার মস্কো থেকে অনলাইনে সংকেত পাঠিয়ে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার সঙ্গে রোজনেফটের প্রধান নির্বাহী ইগর সেখিন ও রাশিয়ায় এক্সন মবিলের প্রধান গ্লেন ওয়াকারও উপস্থিত ছিলেন। পুতিনের সহচর হিসেবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছেন সেখিন।

রোজনেফট বা এক্সন মবিল কোনো পক্ষই প্রকল্প উদ্বোধনের ব্যাপারে তাত্ক্ষণিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য জানায়নি।

২০১৮ সালের মধ্যে আর্কটিক মহাসাগরে ইউনিভার্সিতেতস্কায়ার মতো ৪০টি অনুসন্ধান প্রকল্পের পরিকল্পনা আছে রোজনেফটের। সে অঞ্চলে অনুসন্ধানযোগ্য এলাকাটির আয়তন মস্কো নগরের সমান এবং সেখানে প্রায় ৯০০ কোটি ব্যারেল তেল মজুদ রয়েছে বলে অনুমান রোজনেফটের।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও কীভাবে পশ্চিমের সবচেয়ে বড় জ্বালানি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে দেশটি। লন্ডনভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের গবেষক জন লাফ মনে করছেন, জ্বালানি খাতের জন্য রাশিয়ার ওপর এখন পর্যন্ত আরোপিত নিষেধাজ্ঞা যথেষ্ট নয়।

কেবল এক্সনেরই নয়, বাজার মূলধনের হিসাবে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানি কোম্পানি ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামেরও (বিপি) বড় স্বার্থ আছে রাশিয়ায়। রোজনেফটের ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ব্রিটিশ বহুজাতিক কোম্পানিটি।

তবে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বিশ্লেষক এডওয়ার্ড চো’র মত অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে আর্কটিক মহাসাগরের তেল শিল্প উন্নয়নের প্রক্রিয়াটি কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হবে নিষেধাজ্ঞার কারণে। চো আরো বলেন, উন্নয়ন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার উদ্দেশ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়নি।

মার্কিন অর্থ দফতরের সন্ত্রাসবাদ ও আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বে থাকা সহকারী মন্ত্রী ডেভিড এস কোহেন বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞাধীন দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করছে এমন মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ আছে।’ তবে তিনি এসব নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি, এক্সন মবিলের বিষয়েও নয়।

এনার্জি আসপেক্টের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, রাশিয়ার সঙ্গে আইনসিদ্ধ অংশীদারিত্বে গেলেও ভূ-রাজনৈতিক ও আর্থিক অনেক ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে পশ্চিমের কোম্পানিগুলোর জন্য। দীর্ঘমেয়াদে এ পরিস্থিতি বজায় থাকলে নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য সফল হবে।