রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ যথাসময়ে শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়নে নিয়ন্ত্রন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে গঠিত জাতীয় কমিটির চতুর্থ বৈঠকে সভাপতিত্ব করার সময় তিনি এ নির্দেশ দেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, এই বড় প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এতে পূর্ববর্তী বৈঠকের সিদ্ধান্তও পর্যালোচনা করা হয়।
প্রকল্পটির বিস্তারিত উপস্থাপন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ সিরাজুল হক খান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তাঁর সরকার আন্তর্জাতিক আনবিক সংস্থার সঙ্গে আলোচনার পর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ক্ষমতা বদলের পর পরবর্তী সরকার এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি। ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকার আন্তর্জাতিক আনবিক সংস্থার অনুমতি নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রকল্পটি গ্রহণের আগে রাশিয়ার সরকারের কাছে এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আশ্বাস পেয়েছি। এ ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নেই। তাই এটা জরুরী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পারমাণবিক বিদ্যুতের ওপর বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের জ্ঞান অর্জিত হবে। এছাড়া এ প্রকল্পে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানও হবে।
অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ড. মশিউর রহমান ও ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদ, প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এবং সংশ্লিষ্ট সচিবরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটি নির্মাণের জন্য গত বছর ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশন এবং রাশিয়ার কোম্পানি জে এস সি এটোমস্ট্র্যোসপোর্ট’র সঙ্গে একটি সাধারণ নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাশিয়ার রাস্ট্রীয় আনবিক শক্তি সংস্থা রোসাটম এই ঠিকাদার কোম্পানি নিয়োগ দেয়। এটি বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার।
এই প্রকল্পটির অর্থায়ন চূড়ান্ত করে ১৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি করা হয়। এর আগে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটির প্রকৌশল নকশার অর্থায়নে রাশিয়ার সঙ্গে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি আন্তঃসরকার এবং ২০১১ সালে রোসাটমের সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি সই হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়নে রাশিয়া সব ধরনের সহায়তা দেবে এবং জ্বালানি সরবরাহ ও ব্যবহৃত জ্বালানিও ফেরত নেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর ২৬২ একর জমির ওপর দুই ইউনিটে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার এই প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন ২০২১-২০২২ সালের মধ্যে শুরু হবে।