রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুতে সুদসহ খরচ ১৮ বিলিয়ন ডলার
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে সুদে আসলে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার বা এক লাখ আট হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। মূল খরচের তিনভাগের একভাগই সুদ। এ থেকে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
সোমবার রাজধানির হোটেল সোনারগাঁও এ অনুষ্ঠিত বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সচিবদের এক মত বিনিময় সভায় এই তথ্য জানানো হয়। এসময় বিজ্ঞানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ প্রায় সকল মন্ত্রনালয়ের সচিব উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে রাশিয়ার সাথে মোট ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার বা এক লাখ এক হাজার ২০০ কোটি টাকার চুক্তি করা হয়েছে। এরমধ্যে আন্তঃসরকার ঋণ চুক্তির মাধ্যমে অর্থাৎ রাশিয়ান সরকারের কাছ থেকে নেয়া হবে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। এই ঋণের সুদের হার হবে লন্ডন আন্তঃব্যাংক সুদ হার (লাইবর) এর সাথে এক দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে কখনই তা মোট চার শতাংশের বেশি হবে না। এই হারে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য ছয় দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার সুদ দিতে হবে। মোট ৩০ বছরে সুদে আসলে শোধ করতে হবে। তবে প্রথম ১০ বছর ঋনের সুদ দেয়া লাগবে না।
বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে কর্মরত সচিবদেরকে রাশিয়াতে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কয়েকজন সচিব রাশিয়ায় পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখে এসেছেন। পর্যায়ক্রমে অন্যদেও পাঠানো হবে। যারা দেখে এসেছেন আর তাদের অনুভূতি এবং যারা যাবেন তাদের প্রত্যাশার কথা শোনা হয় গতকালের অনুষ্ঠানে।
বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় আয়োজিত মতবিনিমিয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। এ সময় বিজ্ঞান মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহম্মাদ শফিউল আলম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, ¯^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজ্জাম্মেল হক খান, অর্থ বিভাগের সিনিয়ন সচিব মাহবুব আহমদে, বিজ্ঞান সচিব সিরাজুল হক খানসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাব বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঋণ নেয়ার ১০ বছর পর সুদ শুরু হবে। ৩০ বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে পুরো টাকা। মূল ঋণের প্রথম কিস্তি ২০২৭ সালের ১৫ই মার্চ পাওয়া যাবে। প্রতি বছরের ১৫ই মার্চ ও ১৫ই সেপ্টে¤\^র সমপরিমাণ কিস্তিতে বাংলাদেশ সরকারকে ঋণ শোধ করতে হবে। সুদের এই হার ধরেই রাশিয়াকে বাংলাদেশের ১৮ বিলিয়ন ডলার শোধ করতে হবে।
এদিকে নতুন আরেকটি পরমানু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্চে বলে অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান সচিব জানান। এই কেন্দ্রের জ্বালানি ব্যবহারের পর যে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থাকবে তা রাশিয়া নিয়ে যাবে। এজন্য রাশিয়ার সঙ্গে আলাদা একটি চুক্তি করা হবে। এই বর্জ্য দিয়ে আবার জ¦ালানি তৈরী করবে রাশিয়া। এই বর্জ্যওে অর্থনৈতিক মূল্য আছে। রাশিয়াকে এই বর্জ্য দেয়ার জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে কিনা জানতে চাইলে বলা হয়, বাংলাদেশের টাকা প্ওায়ার সম্ভাবনা কম। কারন এটি বর্জ্য। এটি বাংলাদেশের কোনো কাজে লাগবে না।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রর মেয়াদ ৫০ বছর। তবে ৯০ বছর একটানা একই হারে চলতে থাকবে। বাংলাদেশে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর প্রথম ইউনিট ২০২১ সালের মধ্যে চালু হওয়ার কথা। ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ১০ ভাগ পারমানবিক থেকে করা হবে। কেন্দ্রটি পরিচালনা করবে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি বাংলাদেশ’।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম পর্যায়ের কাজ ডিসে¤\^রে শেষ হওয়ার কথা। এরপর পরমানু চুল্লি তৈরির কাজ শুরু হবে। কেন্দ্রটির নকশা তৈরির কাজ শেষ করেছে এটমস্ট্রয় এক্সপার্ট।