রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারত থেকে সিমেন্ট আমদানি শুরু
রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারত থেকে সিমেন্ট আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়া এই কেন্দ্রে
নানাভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে ভারত।
ভারত প্রয়োজনীয় জনবল প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেবে। সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করবে তারা। প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারতের কাছ থেকে এই সহায়তা নেয়া হচ্ছে। এবিষয়ে বাংলাদেশ ভারত রাশিয়া ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। তবে প্রকল্পের মূল প্রযুক্তি সরবরাহ করবে রাশিয়া।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারতের যুক্ততার বিষয়ে ১লা মার্চ মস্কোতে রাশিয়া, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। এমওইউ অনুযায়ী, ভারত তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে রূপপুর প্রকল্পের জন্য জনবল প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দেবে। ভারতের ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার এনার্জি পার্টনারশিপ (জিসিএনইপি)’ এর সাথে বাংলাদেশ দুটি আন্তঃসরকারি এবং আন্তঃএজেন্সি চুক্তি করেছে। এই চুক্তির আওতায় ভারতের গ্লোবাল সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার এনার্জি পার্টনারশীপ রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে ও পরিচালনায় প্রয়োজনীয় জনবল প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শক সেবা দেবে।
ভারত রূপপুর পরমাণু কেন্দ্রে সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজের সুযোগ পাবে। চুক্তির আওতায় ভারতীয় ঠিকাদাররা নির্মাণ এবং স্থাপন কাজের দরপত্রের মাধ্যমে বা সরাসরি কিছু মালামাল সরবরাহ করতে পারবে। ভারতীয় কোম্পানি প্রকল্পের নির্মাণ, যন্ত্রপাতি স্থাপন, নিজের দেশে উৎপাদিত সামগ্রী এবং নিজেদের তৈরি কিছু কিছু যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করবে। তবে কোন ক্রিটিক্যাল যন্ত্র সরবরাহ করতে পারবে না। অর্থাৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রের টারবাইন বা রিএকটর সরবরাহ করতে পারবে না। শুধু নন-ক্রিটিক্যাল যন্ত্র সরবরাহ করবে।
মূল চুক্তি অনুযায়ি রাশিয়াই প্রযুক্তি সরবরাহ, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং জনবল প্রশিক্ষণ দেবে। প্রকল্প ব্যবস্থাপক (প্রজেক্ট ম্যানেজার) এবং অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের রাশিয়া প্রশিক্ষণ দেবে।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য ভারত থেকে সিমেন্ট আমদানি শুরু হয়েছে। এছাড়া ঈশ্বরদ্বী থেকে রূপপুর পর্যন্ত যে ২৬ কিলোমিটার রেললাইন করা হচ্ছে তাও বাংলাদেশ ভারতের তিন প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে করছে। ভারতের জিপিটি গ্রুপ এবং বাংলাদেশের এসইএল ও সিসিসিএল যৌথভাবে এই রেল লাইন করবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের সাথে এবিষয়ে চুক্তিও হয়েছে।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রর মূল কনসস্ট্রাকশন কাজও যৌথভাবে ভারতের কোম্পানি করবে। সম্প্রতি এবিষয়ে রাশিয়ার এটমএ·পোর্ট এর সাথে চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশের ম্যাক্স কনসট্রাকশন এই কাজ করবে। আর ম্যাক্স এর সাথে যৌথভাবে থাকবে ভারতের হিন্দুস্থান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ও উন্নয়নে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার জন্য চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেন। তারই আওতায় ভারতের কাছ থেকে পরামর্শক সেবা নেয়া হচ্ছে। সাথে জনবল প্রশিক্ষণে সহায়তা নেয়া হচ্ছে। রূপপুর প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশি পেশাজীবীরা তামিলনাডুর কুদনকুলম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।
রুশ বার্তা সংস্থা স্পুৎনকি সম্প্রতি জানিয়েছে, ১৯৯৮ সালে ভারত পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পর নয়াদিল্লির ওপর আর্ন্তজাতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তারপর এই প্রথম ভারত কোনো আর্ন্তজাতকি পারমাণু প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে। যদিও ভারত এখনো নিউক্লিয়ার সাপ্লাইর্য়াস গ্রæপের (এনএসজি) সদস্য হয়নি।
গত বছর অক্টোবরে প্রকল্পটির মূল নির্মাণপর্ব (ফাস্ট কংক্রিট পোরিং) শুরু হয়েছে। আর সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এর দ্বিতীয় পর্বের কাজ উদ্বোধন করেছেন।
বিজ্ঞান সচিব আনোয়ান হোসেন এবিষয়ে বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশি দেশ। পরমাণুতে তারা অভিজ্ঞ। বাংলাদেশের আগেই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র শুরু করেছে। এজন্য তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ নেয়া হবে। একই সাথে দক্ষজনশক্তি তৈরি করতে প্রশিক্ষণের জন্য সেখানে পাঠানো হবে।