রূপপুর দুর্নীতি: রিটের পর দুই তদন্ত কমিটি, যাচাই করে ঠিকাদারকে টাকা
রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রর আসবাব কেনায় অনিয়মের অভিযোগে ঠিকাদারের টাকা পরিশোধ স্থগিত করা হয়েছে।বাজার দর যাচাই করে এই অর্থ শোধ করা হবে।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্র এতথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পে গণপূর্ত অধিদফতর নির্মাণাধীন ছয় ভবনে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজের অনিয়ম তদন্তে দুটো কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একজন অতিরিক্ত সচিব এবং গণপূর্ত অধিদফতর থেকে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার বিল বন্ধ রাখার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কাজের বিপরীতে এখনো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করা হয়নি বলে জানা গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করা হবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। আর রোববার এ রিট করেন তিনি।
বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর হাইকোর্ট বেঞ্চে সোমবার এ রিট আবেদন শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।
এতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিবসহ ৬ জনকে বিবাদি করা হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্রিনসিটি প্রকল্পের ২০ ও ১৬ তলা ভবনের ১১০টি ফ্ল্যাটের জন্য আসবাবপত্র কেনা এবং ভবনে উঠানামায় অস্বাভাবিক খরচ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ব্যারিস্টার সুমন সাংবাদিকদের বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছেন। এই প্রকল্পে যে টাকা খরচ দেখানো হয়েছে তা এ দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকা। তাই বিষয়টি জবাবদিহিতায় আসা উচিত।
একটি বৈদ্যুতিক চুলার দাম ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৭শ ৪৭ টাকা এবং তা ভবনে তুলতে খরচ ধরা হয়েছে ৬হাজার ৬শ ৫০ টাকা, একটি বালিশের দাম ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯শ ৫৭ টাকা এবং তা ভবনে তুলতে খরচ ধরা হয়েছে ৭শ ৩০ টাকা। একটি বৈদ্যুতিক কেটলির দাম ৫ হাজার ৩শ ১৩ টাকা যা তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৯শ ৪৫ টাকা। একটি টিভির দাম ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৯শ ৭০ টাকা তা ভবনে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭ হাজার ৬শ ৩৮ টাকা, এই টিভি রাখার কেবিনেটের দাম ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৩শ ৭৮ টাকা। এভাবে বিভিন্ন পণ্য ও তা ভবনে তুলতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনে আসবাবপত্রসহ অন্য আনুষঙ্গিক কাজের দরপত্রের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
আজ রোববার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ডেলিগেটেড ওয়ার্ক হিসেবে গণপূর্ত অধিদপ্তর নির্মাণাধীন ৬টি ভবনে আসবাবপত্রসহ অন্য আনুষঙ্গিক কাজের জন্য দাপ্তরিক প্রাক্কলন প্রণয়নপূর্বক ৬টি প্যাকেজে ই-জিপিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্যাকেজসমূহের প্রতিটির ক্রয়মূল্য ৩০ কোটি টাকার নিম্নে প্রাক্কলন করায় গণপূর্ত অধিদপ্তর অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগ দেয়। এক্ষেত্রে দাপ্তরিক প্রাক্কলন প্রণয়ন, অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগে মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’