রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠন

রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠনে আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভা ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি অব বাংলাদেশ’ গঠনের প্রস্তাবেও সায় দিয়েছে।
সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ আইন অনুমোদন দেয়া হয়।
খসড়া আইন অনুযায়ি, নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানিতে চেয়ারম্যান ছাড়া নয়জন পরিচালক থাকবেন। বাংলাদেশ কোম্পানি আইনে এই কোম্পানি পরিচালিত হবে। এই কোম্পানির মালিক থাকবে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন। নতুন গঠিত কোম্পানি স্বাধীনভাবে রূপপুরের পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করবে। খসড়াটি আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার (আইএইএ) নীতিমালা অনুসরণ ও স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রণয়ন করেছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন প্রকল্প। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে ২০১৭ সালের জুন মাসে। এক হাজার মেগাওয়াট সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হবে ২০২১ সালের মধ্যে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে দুটি চুক্তি হয়েছে জানিয়ে মোশাররাফ হোসাইন বলেন, একটি সহায়তা চুক্তি ও অপরটি ঋণ চুক্তি। মোট ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে এক হাজার ৮৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। রাশিয়ান ফেডারেশন থেকে প্রকল্প সহায়তা আসবে চার হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আইনে একটি স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠনের কথা বলা হয়েছে। রাশিয়ান সরকারও কোম্পানি গঠনের জন্য উৎসাহিত করেছে।
নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানির জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় মেমোরেন্ডাম অব এ্যাসোসিয়েশন ও আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন তৈরি করেছে। কোম্পানির জন্য একটি বোর্ড থাকবে। বোর্ডের সভাপতি হবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মšন্ত্রলয়ের সচিব। পরিচালক হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত বা যুগ্মসচিব, লেজিসলেটিভ বিভাগের যুগ্মসচিব, অর্থনৈতিক স¤ক্সদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বা যু¹§সচিব, এফবিসিসিআইএর একজন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র যখন চালু হবে তখন প্রকল্প বিলুপ্ত হয়ে তা কোম্পানির কাছে চলে যাবে। এ ক্ষেত্রে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হবেন কোম্পানির প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাহলে ধারাবাহিকতা থাকবে, কাজের গ্যাপ (শূন্যতা) সৃষ্টি হবে না। পাবনার ঈশ্বরদীর প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের অনুমোদিত মুলধন হবে এক কোটি টাকা। ১০০ টাকা মূল্যের এক হাজার শেয়ারে তা
বিভক্ত থাকবে। প্রকল্পটি কোন পর্যায়ে রয়েছে জানতে চাইলে মোশাররাফ হোসাইন বলেন, এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে।
এই কেন্দ্র স্থাপনে প্রকৌশল জরিপ ও পানি ঠাণ্ডা করা চিমনি (কুলিং টাওয়ার) এর সমীক্ষা চলছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রোসাটম এই কেন্দ্র স্থাপন করবে। রোসাটম কেন্দ্র স্থাপনে প্রয়োজনীয় ঋণও দেবে। প্রকৌশল জরিপ শেষ হওয়ার পর রাশিয়ার সাথে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চূড়ান্ত চুক্তি হবে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকার প্রকৌশল জরিপ শেষ হবে। জরিপ শেষে ঐ এলাকার বাতাসের গতি, ভূমিকম্প বিষয়ক তথ্য, কোন কাঠামোর কেন্দ্র করা হবে ইত্যাদি বিষয় জানা যাবে।
এখানে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দুটি ইউনিট থাকবে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ এখান থেকে প্রথম ইউনিটটি চালু হতে পারে। সর্বাধুনিক ও নিরাপদ ভিভিইআর প্রযুক্তি ভিত্তিক পারমানবিক চুল্লি স্থাপন করা হবে।
এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌ-রুট বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের খসড়া অনুমোদন হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় এ চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার কথা। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কবে আসবেন, তা ঠিক হয়নি। সচিব জানান, দুই দেশের পণ্যবাহী জাহাজগুলোর গন্তব্যে পৌঁছাতে এখন সময় লাগে ১৪ দিন। আর এই চুক্তি হলে তখন সময় লাগবে চার থেকে পাঁচ দিন।