রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন কিন্তু গ্যাস নেই

সম্পাদকীয়:
রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে কয়েক দিন আগে।কিন্তু গ্যাস নেই। একদিকে গ্যাসের জন্য হাহাকার। অন্যদিকে লোডশেডিং মুক্ত সন্ধ্যা। অথচ গ্যাস-বিদ্যুৎ দুটোই একে অপরের পরিপূরক।
চারদিকে গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে বিদ্যুতে দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকলে যেমন অর্থনৈতিক লোকসান। অগ্রগতিতে বাধা। গ্যাসের ক্ষেত্রেও তার বিকল্প নয়।
গ্যাস না থাকলেও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা পড়বে। তাই শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনে নয় জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতেও জোরাল নজর দিতে হবে।
শনিবার , ১৬ই এপ্রিল রাত ৯টায় ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এক সাথে এত বিদ্যুৎ এর আগে আর উৎপাদন হয় নি।
এর আগের ১২ই এপ্রিল ১৪ হাজার ৪২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছিল। এখন যখন যতটুকু বিদ্যুৎ প্রয়োজন হচ্ছে ততটুকু উৎপাদন করা যাচ্ছে। ঘাটতি নেই। লোডশেডিং নেই। বলা হচ্ছে, এই গরমেও কোন লোডশেডি়ং হবে না।
বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় গ্যাস তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। মোট গ্যাসের ৪০ ভাগ দেয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ইফতার, তারাবি
আর সেহরির জন্য এখন শিল্প, সার ও সিএনজিতে গ্যাসের রেশনিং করা হচ্ছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে এ সব জায়গায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হচ্ছে। এত দিন শুধু সিএনজি ও সারে ঘোষণা দিয়ে কম গ্যাস দেয়া হত। নতুন করে যোগ হয়েছে শিল্প।
বিদ্যুৎ থাকলেও এভাবে গ্যাস সংকট নতুন করে উদ্বেগ বাড়িছে শিল্পে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা শিল্পে গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রয়েছে। এটা ১৫ দিনের জন্য।
অনেক শিল্প আছে যাদের গ্যাস অন্যতম জ্বালানি।
তাছাড়া ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ করতেও গ্যাসের প্রয়োজন। এতে সব শিল্পই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তবে এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি অনেক উদ্যোক্তা। মানা সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, শিল্পকারখানায় গ্যাস রেশনিং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুদ্ধারকে বাধাগ্রস্ত করবে। যে সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান সব সময় চালু রাখতে হয় তা হঠাৎ বন্ধ করলে যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বেশি করা হচ্ছে। এজন্য শিল্পে চার ঘণ্টা গ্যাস বন্ধ। তারমানে ঈদের পরে যখন শিল্পে রেশনিং তুলে নেয়া হবে, শিল্পে যখন পুরোপুরি গ্যাস দেয়া হবে, তখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ কমবে। তারমানে তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন যথাযথ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
কারণ, গ্যাস সরবরাহ এখন যা করা হচ্ছে ঈদের পরেও তার চেয়ে বেশি করার কোনো সম্ভাবনা নেই। এখন এলএনজি আমদানিও সর্বোচ্চ পরিমাণ হচ্ছে। ফলে গ্যাস সরবরাহ এখনকার চেয়ে আরও বেশি হওয়ার কোন কারণ দেখা যাচ্ছে না।
গত ডিসেম্বর থেকে চলতে থাকা গ্যাস সংকট কবে মিটবে তা অজানা। তাই এর একটা স্থায়ী সমাধান দরকার।