লোকসানে চলছে ৫০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি
দেশের ৭২টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) মধ্যে বর্তমানে লাভজনক অবস্থায় আছে ২২টি এবং লোকসানে চলছে ৫০টি সমিতি। ২০০৮ সালে লাভজনক সমিতির সংখ্যা ছিল মাত্র ৪টি। গত ছয় বছরে ১৮টি সমিতি লাভে এসেছে। এর মধ্যে গত এক বছরে লাভজনক অবস্থায় এসেছে ১০টি সমিতি। ২০১৮ সালের মধ্যে (৩ বছরের) আরও ২৮টি সমিতিকে লাভের কাতারে এনে লাভজনক সমিতির সংখ্যা ৫০ এ উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। এ লক্ষ্যে পবিস-এর জিএমদের (মহাব্যবস্থাপক) প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান বিআরইবি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন। বিআরইবি সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত দেশের সবচেয়ে বড় এই সংস্থাটি তার অধীনস্থ ৭২টি সমিতির মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়। সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি করে বিআরইবি। লাভজনক অবস্থায় যাওয়ার পূর্বশর্ত বেশি বেশি বিদ্যুৎ বিক্রয় করা। এজন্য প্রয়োজনে গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানো। তবে পবিসে নিয়োজিত জিএমদের (মহাব্যবস্থাপক) পশ্চাদপদ মানসিকতার কারণেই এখনও লোকসানে আছে বেশিরভাগ সমিতি।এ বিষয়ে বিআরইবি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন সম্প্রতি বিআরইবিতে অনুষ্ঠিত ডিজিএম সম্মেলনে বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে আরও ২৮টি পবিসকে লাভজনক অবস্থায় নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে জিএমদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সমিতিকে লাভজনক অবস্থায় নিতে গ্রাহক বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। সিস্টেম আপগ্রেড করে বেশি বেশি বিদ্যুৎ কিনে তা বিক্রি করলেই লাভ বাড়বে। তবে পবিসে নিয়োজিত জিএমরা বেশি বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিষয়ে উদ্যোগহীন। তারা সংযোগ প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে তা পবিসে সংরক্ষণ করার চেয়ে সমিতির টাকা ডিপোজিট করে সুদ গ্রহণকে বেশি নিরাপদ মনে করেন। জিএমদের এ ধরনের মানসিকতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সমিতিগুলো লাভের মুখ দেখেনি।বিআরইবি সূত্রে জানা গেছে, দ্রুত গ্রাহক সংযোগ দেয়ার মতো প্রয়োজনীয় মালামাল সংরক্ষিত থাকে না বেশিরভাগ পবিসের। সংযোগের জন্য আবেদনের স্তূপ হলে জিএমরা মালামাল ক্রয়ের চাহিদাপত্র পাঠান লিডিং পবিসকে। এরপর এই মালামাল আসা, অর্থ প্রদানসহ বিভিন্ন জটিলতায় দ্রুত সংযোগ দেয়া সম্ভব হয় না। এদিকে আবেদনের পাহাড় জমতে থাকে। এই জটিলতা কমাতে ডিজিএমদের (উপ-মহাব্যবস্থাপক) আবাসিক গ্রাহক সংযোগের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। যা আগে জিএমদের আয়ত্তে ছিল।ডিজিএমদের (উপ-মহাব্যবস্থাপক) উদ্দেশে বিআরইবি চেয়ারম্যান বলেন, আবাসিক গ্রাহকদের চাহিবামাত্র সংযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনে কার ঘরে বিদ্যুৎ নেই সেটা খুঁজে বের করতে হবে। ডিজিএমদের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে আবাসিক গ্রাহকদের সংযোগ এখন তারাই দিতে পারেন। আগে জিএমদের অনুমতি লাগত। সংযোগ পেন্ডিং রাখা পকেটে অবৈধ টাকা ঢুকানোর পলিসি। একটি এলাকায় যদি কয়েক হাজার সংযোগ আবেদন পেন্ডিং থাকে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই একটু আগে সংযোগ পেতে অনেক গ্রাহক বেশি অর্থ দিতে রাজি হবে। তাই পেন্ডিং সংযোগের পাহাড় জমানোর সংস্কৃতি চালু হয়েছে।বিআরইবি সূত্রে জানা গেছে, বিআরইবিতে মালামালের সংকট নেই। প্রতিমাসে তিন থেকে চার লাখ মিটার, সার্ভিস ড্রপ, ট্রান্সফরমার দেয়ার সক্ষমতা বিইআরবি’র আছে। তবে প্রতিমাসে এত সংযোগ দিতে পারছে না পবিসগুলো। এদিকে এখনও ছয় লাখের বেশি পেন্ডিং আবেদন পড়ে আছে। দ্রুত এসব সংযোগ দেয়ার লক্ষ্যে প্রতিমাসে একটি সমিতিকে ৪ হাজার পেন্ডিং গ্রাহককে সংযোগ প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর মোট ৭২টি পবিসের অধীন অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার পেন্ডিং সংযোগ দিতে বলা হয়েছে। গত এপ্রিলে রেকর্ড ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৯টি সংযোগ দেয়া হয়েছে।এদিকে বিদ্যুৎ বিতরণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পবিসে নিয়োজিত কয়েকজন জিএম। ঢাকা বিভাগে কর্মরত এক জিএম বলেন, সমিতির লাভলসের চিন্তাভাবনা করেই একজন জিএমকে কাজ করতে হয়। বেশিরভাগ পবিসের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তাই গ্রাহক প্রান্তে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে গিয়ে এমনিতেই সিস্টেমলস বেশি হচ্ছে। এ অবস্থায় যত বেশি গ্রাহক তত বেশি সিস্টেমলস। সিস্টেমলস কমানোর টার্গেট জিএমকেই অ্যাচিভ করতে হয়।সিলেট বিভাগে কর্মরত এক জিএম বলেন, একজন জিএমকেই সব চাপ নিতে হয়। সিস্টেমলস কমানো, আবার গ্রাহক বাড়ানো। বোর্ডেরও কিছু দায়িত্ব আছে। দ্রুত আমাদের সিস্টেম আপগ্রেড করতে হলে যতটুকু সহযোগিতা বোর্ডের করা উচিত ততটুকু পাওয়া যাচ্ছে না।নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক অপর এক জিএম বলেন, আমার সমিতির লভ্যাংশ ডিপোজিট রেখে প্রায় ৭ শতাংশ সুদ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিমাসে একটা বিশাল এমাউন্ট আসছে। আমি মালামাল কিনে ভরে রাখলে এই টাকা আসবে না। যখন আমি এখান থেকে চলে যাব, তখন নতুন জিএম বলবেন, এই জিএম সমিতিকে ডুবিয়ে রেখে গেছে। ওনার আগের জিএম এর মেয়াদে সমিতিতে আরও বেশি লাভ হতো।