শত বিদ্যুৎকেন্দ্র সত্ত্বেও লোডশেডিং!
রাজধানীসহ সারাদেশে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে লোডশেডিং। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিল জুড়েই এই ভোগান্তিতে পড়েছে গ্রাহকরা। একদিকে প্রচণ্ড গরম অন্যদিকে রাজধানীতে দিনে কোথাও এক ঘণ্টা, কোথাও দুই থেকে তিন ঘণ্টাও লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। গ্রামে এর পরিমাণ আরো বেশি। কোথাও কোথাও সারা সন্ধ্যা বিদ্যুৎ থাকে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বছরের ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে উল্লেখ করার মতো বিদ্যুৎ যায়নি। শীতের কারণে বিদ্যুতের চাহিদাও ওই সময় কম ছিল। কিন্তু গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের লোডশেডিংও শুরু হয়ে গেছে।
দেশে এখন ১০২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৭৪৪ মেগাওয়াট। অন্যদিকে সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা এখন ৮ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এই হিসাবে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি। এ অবস্থার মধ্যে লোডশেডিং হওয়াটা হিসাবের মধ্যে ফেলতে পারছে না কেউই।
রোববার সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত তিন থেকে চারবার বিদ্যুৎ চলে গেছে। তবে প্রতিবার এক ঘণ্টা লোডশেডিং হয়নি। কখনো কখনো ৩০ মিনিটেও বিদ্যুৎ চলে এসেছে। সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুইবার বিদ্যুৎ গেছে। প্রতিবারই ৩০ মিনিট করে বিদ্যুৎ ছিল না। এরপর সন্ধ্যা থেকে রাতের বেলাও একবার এক ঘণ্টার লোডশেডিং হয়েছে বলে জানালেন রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা কামরুজ্জামান। একই অভিযোগ রাজধানীর বনশ্রীর বাসিন্দা লিলি জামানের। তিনি বলেন, দিনের বেলা লোডশেডিং হলে এক ঘণ্টা তাও সহ্য করা যায়। রাতের বেলা এই গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেলে ঘুমানোটাই কঠিন হয়ে পড়ে। রামপুরা থেকে কাজী রুশিয়া জানান, দিনের বেলায় একবারই এক ঘণ্টার লোডশেডিং হয়েছে। সন্ধ্যার পর আরো এক ঘণ্টা। তিনি বলেন, সরকার বলছে, ১০০ বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে, তাহলে লোডশেডিং কেন হচ্ছে? এ ছাড়া মুগদা, বাসাবো, মগবাজার, মালিবাগ এলাকাসহ পুরান ঢাকা এবং মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকেও লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগই ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) এলাকার গ্রাহকদের।
জানতে চাইলে ডিপিডিসির পরিচালক (অপারেশন) হারুনুর রশিদ বলেন, ডিপিডিসি যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পায় তার পুরোটাই গ্রাহকদের সরবরাহ করতে পারে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় যদি বিদ্যুৎ কম পাওয়া যায়, সেই দোষ ডিপিডিসির নয়। সেক্ষেত্রে ডিপিডিসিকে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হয়।
বর্তমানে ঢাকায় বিদ্যুতের চাহিদা আছে ২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এরমধ্যে বড় অংশই ডিপিডিসির। বাকিটুকু সরবরাহ করছে ডেসকো। গতকাল সোমবার ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় লোডশেডিং হয়েছে ১১৫ দশমিক ৬ মেগাওয়াট। এটি সন্ধ্যা পর্যন্ত হিসাব। ডেসকোর অধীন উত্তরা ও গুলশানেও লোডশেডিং হচ্ছে। তবে এর পরিমাণ কিছুটা কম।
এদিকে ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা থেকে অভিযোগ এসেছে, প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। এ উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ২০ মেগাওয়াট। বরাদ্দ ১৫ মেগাওয়াট। ফটিকছড়ি উপজেলায় দিন রাতে ৮ থেকে ১০ বারও লোডশেডিং করা হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে কাহিল অবস্থা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) জানায়, এ উপজেলায় চাহিদা ১৮ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যায় ১০ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং ছাড়া কোনো বিকল্প থাকে না। মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না। পবিস জানায়, মির্জাপুর গড়ে প্রতিদিন ৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে ২৫-২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কিছুটা লোডশেডিং করতে হয়। সিলেটের বানিয়াচংয়ে দিনে ১৫ থেকে ২০ বার লোডশেডিং হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকেই অনেক সময় বিদ্যুৎ আসেই না। দিনাজপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রার মধ্যেই ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
পিডিবি জানায়, সোমবার দেশের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৭ হাজার ৪৪৭ মেগাওয়াট। বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে ৭ হাজার ১৪৬ মেগাওয়াট। মোট ৩০২ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। এরমধ্যে খুলনায় ৮ মেগাওয়াট ও রাজশাহীতে ২০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।
জ্বালানি সংকট ও মেরামতের কারণে বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে জ্বালানি সংকটে ১ হাজার ৪৪ মেগাওয়াট এবং মেরামতের জন্য ১ হাজার ৩৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না।