শাহবাগে দফায় দফায় সংঘর্ষ: ১১ মার্চ খুলনায় মহাসমাবেশ

রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা অর্ধদিবস হরতালে শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ এলাকায় আজ সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের টিয়ারশেল, জলকামান ও রাবার বুলেটের আঘাতে ১০ জন আহত হয়। গ্রেফতার করা হয় পাঁচজনকে। পুলিশের হামলার শিকার হয় সাংবাদিকরাও।
বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে টিএসসি মোড় থেকে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যায় হরতাল সমর্থনকারীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনের রাস্তায় পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে সেখানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

RAMPAL SHAHBAGH
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলটি জাতীয় জাদুঘরের সামনে আসলে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখোমুখি হয়। পুলিশ মিছিলটি শাহবাগ অতিক্রম করতে না দিলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীরা পুুলিশের বাধা উপেক্ষা করে যেতে চাইল পুলিশ টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের লাঠিচার্জ করে। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান দিয়ে গরম পানি নিক্ষেপ করে। কিছুক্ষণ পর পর বিক্ষোভকারীরা শাহবাগের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এভাবে থেমে থেমে প্রায় ছয় ঘন্টা ধরে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে শাহবাগ থানার সামনে থেকে টিএসসি পর্যš— পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সৃষ্টি হয় ভীতিকর পরিবেশ।
পুলিশের টিয়ার শেল ও লাঠিচার্জে আহতরা হলেন-ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির, ছাত্রফন্টের নাসির উদ্দিন প্রিন্স, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার, সাধারণ সম্পাদক জিএম জিলানী শুভ, জয় বনিক, আজিজুল হক কনক, লাবনী, সৈয়দ ফরহাদ এবং মিজানুর রহমান। আহতদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। গ্রেফতার করা হয়- হাসিব মাহমুদ আশিক, মিজান, মাহতাব, তপু এবং জুয়েলকে। আহতরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী তারা শাহবাগে অবস্থান নেন। হরতাল চলাকালে পুলিশ তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
এদিকে হরতাল সমর্থনকারীরা সকাল সোয়া ১০টার দিকে পল্টন মোড়ে অবস্থান নেয়। এ সময় মতিঝিলমুখী সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। তারা পল্টন, প্রেসক্লাব, দৈনিক বাংলা মোড় ও আশপাশের সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। পরে বেলা ১২টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয় তারা। একপাশের রাস্তা আটকিয়ে দিয়ে তারা রাস্তায় বসে পরে। এ সময় যান চলাচল বন্ধ ছিল।
এরপর প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে জাতীয় কমিটি। এ সময় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহম্মদ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির উপরে যে ন্যক্কারজনক হামলা সরকার করেছে, তার মধ্য দিয়ে সরকারের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। আমরা সেই নৈতিক পরাজয়ের প্রতি ধিক্কার জানাই। যতদিন রামপাল প্রকল্প বন্ধ না হবে ততদিন এই আন্দোলন চলবে বলে তিনি জানান। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের আন্দোলনে দমন-পীড়ন চালানো সরকারের দুর্বলতারই লক্ষণ। ভারতকে খুশি করার জন্য সরকার এই প্রকল্প করছে। জনগণের করের টাকায় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাতিল করা হবে। বিপ­বী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন থেকে তাঁদের পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। এই প্রকল্প বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
সমাবেশ থেকে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আগামী ২৮ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি। এরপর ১১ মার্চ খুলনা মহানগরীতে ‘উপকূলীয় মানুষদের নিয়ে’ সমাবেশের কর্মসূচিও করবে জাতীয় কমিটি।

Pressclub-Hartal-03
অন্যদিকে হরতালের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ ঠেকাতে মারমুখী পুলিশ শাহবাগ থানার সামনে দুই সাংবাদিককে মারধর করেছে। পুলিশের মারধরে আহত এটিএন নিউজের প্রতিবেদক এহসান বিন দিদার ও ক্যামেরা পারসন আব্দুল আলীমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া টিয়ার শেল মাথায় লেগে কালের কণ্ঠের চিফ ফটোগ্রাফার শেখ হাসান এবং ঢিল লেগে ঢাকা ট্রিবিউনের আলোকচিত্রী মোহাম্মদ হোসেন অপুও আহত হয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার বলেন, শাহবাগ রাজধানীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে দুটি হাসপাতালও রয়েছে। তাই শাহবাগের সড়কগুলো বন্ধ হলে রোগীসহ সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। হরতালকারীরা রাস্তা অবরোধ করতে চেয়েছিল। পুলিশ তাতে বাধা দিলে তারা পুলিশের উপর ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। তখন আমরা জলকামান ও টিয়ারশেল ব্যবহার করি। তিনি জানান, সাংবাদিক মারার ঘটনায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) এরশাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে মিরপুরেও রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে হরতাল সমর্থকরা ব্যারিকেড তৈরির চেষ্টা করে। তবে পুলিশি বাধায় প্রধান রাস্তায় পিকেটাররা অবস্থান নিতে পারেননি বলে জানা যায়। তবে ঢাকার অন্য এলাকার যান চলাচল স্বাভাবিক ছিলো।
গত ৭ জানুয়ারি ‘গে­াবাল প্রটেস্ট ডে ফর সুন্দরবন’ উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত এক সমাবেশে হরতালের ঘোষণা দেন আনু মুহম্মদ। এ হরতালে সমর্থন দেয় বিএনপি ও প্রগতিশীল ছাত্রজোট।