শুধু উৎপাদন নয়, বিতরণ ও সঞ্চালনেও দক্ষ হতে হবে
শুধু উৎপাদন নয় বিতরণ ও সঞ্চালনে দক্ষ হতে হবে। সংযত ব্যবহারে করে, অপচয় রোধ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।
আজ রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের দায়বন্ধতা’ শীর্ষক প্রচরণা কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের দুই পর্বে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম এবং বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সকল পর্যায়ের গ্রাহকদের সচেতন করতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কার্যকর ভূমিকা রাখার আহবান জানান।
বাংলাদেশ সোলার এন্ড রিনিউয়েবল এনার্জি এসোসিয়েশন (বিএসআরইএ) এবং ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স ফোরাম (এফইআরবি) যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, টেকসই জ্বালানি নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যুত্ উত্পাদনের চেয়ে বিদ্যুত্ সাশ্রয়ে জোর দেয়া বেশি জরুরি। প্রতি কিলোওয়াট কিংবা মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে বিপুল অর্থ, জনবল এবং সময় খরচ হয় তা যতটুকু সম্ভব কম খরচ করা উচিত। কম বিদ্যুত্ ব্যবহার করে বেশি প্রয়োজন মেটাতে হবে। জ্বালানির সচেতন ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি।
সেমিনারের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. তৌফিক-ই-ইলাহি চৌধুরী বলেন, সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বেসরকারি খাতকে উদ্বুদ্ধ করতে চায়। এ জন্য সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে একসাথে কাজ করতে পারে সে উপায়ও বের করা দরকার। তিনি বলেন, আমাদের অনেকে পশ্চিমা চিন্তাধারায় এবং তাদের মত জীবনযাপন করতে চায়। এটা ঠিক না। সকল জায়গায় আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। আমাদের নিজেদের মডেল তৈরি করতে হবে। অপচয় রোধের বিকল্প নেই।
উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘদিন বিদ্যুতের সরবরাহের দিকটি নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিয়ে কোন কাজ করছি না। এখন সময় হয়েছে বিদ্যুতের সাশ্রয়ের দিকটি নিয়ে কাজ করতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে আমরা যেতে চাই। সেজন্য এখনই ভাবতে হবে।
অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, অনেক উন্নত দেশই এখন বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছে। যাদের প্রাচুর্য বেশি তারা বেশি সাশ্রয় করছে। কিন্তু বাংলাদেশসহ নিম্ন আয়ের কিংবা মধ্যম আয়ের পথে যাওয়া দেশগুলো বেশি অপচয় করছে। এই অপচয় বন্ধ করতে হবে। বিদ্যুত্ সাশ্রয়ী পণ্য ব্যবহার করতে হবে। দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ দরকার। এই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য শুধু উৎপাদন ব্যবস্থা নয়, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থাও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণকারী উভয় কোম্পানিকেই সাশ্রয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে বিদ্যুৎ বিতরণ করলে সাশ্রয় এমনিতেই হবে।
এসময় সাংবাদিকদের এ বিষয়ে আরও দায়িত্বশীল অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন দক্ষ যোগাযোগ কৌশল। নির্দিষ্ট গ্রুপের জন্য নির্ধারিত যোগাযোগ প্রদ্ধতি রপ্ত করা দরকার। বিদ্যুৎ সাশ্রয় বাস্তবায়ন অভিযান ও প্রচারণা একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এটার সফল বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে।
সেমিনারে মূল্য প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মিজার আর খান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিদ্যুত্ সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, স্রেডার চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, পিডিবির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহমুদ, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, বাংলাদেশ সোলার এন্ড রিনিউবল এনার্জি এসোসিয়েশনের সভাপতি দীপাল সি বড়ুয়া, এফইআরবি’র চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকার, নির্বাহী পরিচালক সদরুল হাসান।
স্রেডার চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়ে স্রেডার জন্মলগ্ন থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। এরইমধ্যে স্রেডা ঢাকার বাইরের অনেক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়ে নানা ধরনের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি গণমাধ্যম ও দেশের সচেতন নাগরিকরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে কাজটি আরও সহজ হয়ে যায়।
পিডিবির চেয়ারম্যান বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির মান একটি বড় বিষয়। সস্তা কিন্তু মান ভাল নয় এমন জিনিস ব্যবহার করা থেকে গ্রাহককেও সচেতন থাকতে হবে। অনেক সময় মানুষ নেই কিন্তু এক বিল্ডিংয়ে দুইটা লিফট চলে। আবার অনেক সময় রুমে কেউ নেই কিন্তু বাতি ও ফ্যান, এসি চলছেই। এই বিষয়গুলো যদি বিবেচনায় নেওয়া যায় তাহলে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে শুধু সরকার নয়, সরকারের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে যারা কাজ করছেন, বিদ্যুৎ নিয়ে যারা গণমাধ্যমে লিখছেন সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।