শেষ হল সৌরবিদ্যুৎ মেলা

যেখানে এখনো বিদ্যুতের তার পৌঁছায়নি, সেখানে পৌঁছে গেছে সৌর বিদ্যুৎ। রাতে আলো জ্বলছে, টেলিভিশন চলছে, চলছে সেচ পাম্পও। ভয় নেই লোডশেডিংয়ের, সাথে পরিবেশবান্ধবও। সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারে গত এক দশকে দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে গেছে। বর্তমানে দেড় কোটিরও বেশি মানুষ সৌর বিদ্যুৎ (নবায়নযোগ্য জ্বালানি) ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। তাই সৌর বিদ্যুতের প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও শক্তির এ উত্কর্ষতা জানাতে সমপ্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হলো দুই দিনব্যাপী এক প্রদর্শনীর। প্রদর্শনী ঘুরে ব্যবসায়ী-দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ‘ইডকল গ্রিন এনার্জি এক্সপো-২০১৪’ শীর্ষক এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)’। শুক্রবার শেষ হওয়া এ মেলায় ৫৫টি দেশি ও ৩টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। প্রদর্শনীটি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
মেলার শেষ দিনে দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে প্রতিটি স্টল দেখেন ও সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য নেন। ধানমন্ডির বাসিন্দা ব্যবসায়ী আজমল বলেন, তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার শেরপুরের ভবানীপুরে বিদ্যুৎ নেই। তাই তিনি সৌর বিদ্যুতের ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন। তিনি বলেন, সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে ঘরে বাতি জ্বললে, ফ্যান চললেতো খুবই ভালো। চাকরিজীবী হাসান বলেন, প্রত্যন্ত এলাকার অনেক মানুষ এখনো বিদ্যুত্ সেবা থেকে বঞ্চিত। সৌর বিদ্যুতের ফলে তাদের ঘরেও আলো পৌঁছে যাবে।
মেলায় অংশ নেয়া এনার্জিপ্যাক-এর ‘সবুজ জ্বালানি’ বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার প্রমিত বড়ুয়া বলেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে সেখানে এখনো বিদ্যুত পৌঁছায়নি, সেখানে খুব সহজেই সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আলো জ্বালাতে পারি। সাময়িকভাবে কিছুটা ব্যয়বহুল মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার সাশ্রয়ী।
নিংবো অসডা সোলার কো. লি.-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেনিস মাহমুন বলেন, যেভাবে সৌর বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে তাতে শিগগিরই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আলো পৌঁছে যাবে। তবে তিনি বলেন, সোলার প্যানেল নিয়ে কারো কারো মাঝে নেতিবাচক ধারণা থাকতে পারে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী দ্রুত পয়সা কামানোর মাধ্যম হিসেবে সৌর বিদ্যুৎকে বেছে নিয়েছেন।  এর জন্য এর প্রতি কিছু মানুষের নেতিবাচক ধারণা আছে। অনেকে ২০ বছরের নিশ্চয়তা দিচ্ছে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে দুই বছর পর আর তাদের সেই প্রতিষ্ঠানই নেই।
সাইফ পাওয়ারটেক লি. এর বিক্রয় কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, প্রদর্শনীতে সাধারণ মানুষের খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। তারা বিভিন্ন পণ্য দেখছেন, পাশাপাশি সৌর বিদ্যুত্ ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন। তারা এ পর্যন্ত ১৩ হাজার সোলার প্যানেল বসিয়েছেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, ৩টি বাতি জ্বালানো যাবে এমন সৌর প্যানেল বসাতে ব্যয় হবে আট থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা। এছাড়া সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপযোগী বিভিন্ন এলইডি প্রযুক্তির বাতি ২৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান ‘ইডকল’ জানিয়েছে, তাদের স্থাপিত ৩০ লক্ষ ‘সোলার হোম সিস্টেম’ বর্তমানে দেশের বিদ্যুত্হীন অঞ্চলে ১৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের অধীনে প্রতি মাসে ৬০ হাজারের বেশি ‘সোলার হোম সিস্টেম’ স্থাপিত হচ্ছে।