সমুদ্রে দ্বিমাত্রিক জরিপ করতে দরপত্র আহবান

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দ্বিমাত্রিক জরিপ (মাল্টিক্লাইন্ট সিসমিক সার্ভে) করতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয়েছে। রোববার পেট্রোবাংলা এই দরপত্র আহবান করে। বিদেশী কোম্পানি সমুদ্রে দ্বিমাত্রিক জরিপ করবে। এই জরিপে বাংলাদেশ কোন বিনিয়োগ করবে না। জরিপে যে তথ্য পাওয়া যাবে তার মালিক থাকবে বিদেশী ঐ কোম্পানি। সংশ্লিষ্ঠ বিদেশী কোম্পানিরই শুধু সেই তথ্য বিক্রি করার ক্ষমতা থাকবে। তারা তথ্য বিক্রি করে বিনিয়োগের অর্থ তুলে নেবে। এধরনের জরিপ বাংলাদেশে এই প্রথম হতে যাচ্ছে।
আগামী শুষ্ক মৌসুমের আগেই দ্বিমাত্রিক জপির শুরু করা হবে বলে পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়।
সূত্র জানায়, সমুদ্রের ২০ মিটার থেকে আড়াই হাজার মিটার পর্যন্ত জরিপ করা হবে। ১০ বছরের জন্য বিদেশী কোম্পানির সাথে চুক্তি করা হবে। এরমধ্যে প্রথম দুই বছরে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। বিদেশী কোম্পানির যে খরচ হবে তা তথ্য বিক্রি করে আয় করবে। খরচ উঠে আসার পরে বাংলাদেশ লাভের অংশ পাবে। অতন্ত তিনটি দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এমন কোম্পানিকে কাজ দেয়া হবে।
আগ্রহী প্রতিষ্ঠানদেরকে আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদন কিনতে প্রয়োজন হবে আট হাজার টাকা বা ১০০ ডলার।
দ্বিমাত্রিক জরিপের জন্য বিদেশী কোম্পানির সাথে চুক্তি করা হবে। অনেকটা উৎপাদন বন্টন চুক্তির আদলে এটা হবে। তবে এর সাথে উৎপাদন বন্টন চুক্তি’র কোন সম্পর্ক থাকবে না। এদিকে সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহবান করতে একই সাথে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, এক বা একাধিক  কোম্পানিকে এলাকা ভাগ করে জরিপ করার অনুমতি দেয়া হতে পারে। বিদেশী যে কোম্পানির সাথে চুক্তি হবে তারাই এই তথ্যের মূল মালিক থাকবে। বাংলাদেশের এই তথ্য বিক্রির কোন অধিকার থাকবে না। বাংলাদেশ এই জরিপে কোন বিনিয়োগও করবে না।
সাধারনত যে কোম্পানির সাথে উৎপাদন বন্টন চুক্তি করা হয় তারাই দ্বিমাত্রিক কিংবা ত্রিমাত্রিক জরিপ করে তথ্য নিয়ে থাকে। ভূকাঠামোসহ অন্য কিছু তথ্য পেট্রোবাংলা দিয়ে থাকে।
দ্বিমাত্রিক জরিপের মাধ্যমে সমুদ্রের নিচে গ্যাসের কাঠামো আছে কিনা কিম্বা গ্যাস বা তেল থাকার সম্ভাবনা আছে কিনা তা জানা যাবে। এরপর ত্রিমাত্রিক জরিপ এবং কূপ খনন করে নিশ্চিত হওয়া যাবে গ্যাস বা তেলের মজুদ বিষয়ে।
ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমানা নির্ধারণ হওয়ার পর এলাকা ভাগ করেছে পেট্রোবাংলা। সমুদ্রের কোন কোন এলাকায় তেল গ্যাস অনুসন্ধান হবে তা ভাগ করা হয়েছে। গভীর ও অগভীর সমুদ্রে যেসব এলাকায় এখনও কোন অনুসন্ধান হয়নি তার পুরোটা জুড়েই এই জরিপ করা হবে।
চলতি বছর ভারতের সাথে আর দুই বছর আগে মিয়ারমারের সাথে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির পর প্রায় এক লাখ ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণ হয়েছে।
২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর গভীর ও অগভীর সাগরের মোট ১২টি স্থানে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয়। এরমধ্যে গভীর সাগরের তিনটি স্থানের জন্য কোন আন্তর্জাতিক কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়নি। শুধু অগভীর সাগরের নয়টি স্থানের জন্য দর প্রস্তাব জমা পড়ে। প্রাথমিক বাছাইয়ে সাত নম্বর ব্লকে কনোকো এবং চার ও নয় নম্বরে ওএনজিসিকে নির্বাচিত করা হয়। গতবছরের ২৮শে মে আবার অগভীর সাগরের ছয়টির জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। এতে শুধু ১১ নম্বরের জন্য স্যান্টোস ও ক্রিস এনার্জি যৌথভাবে দর প্রস্তাব দাখিল করে। বর্তমানে কনোকো ফিলিপসের সাথে গভীর সমুদ্রের কোন কোন ব্লক দেয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।