সাবমেরিন কেবল দিয়ে সন্দীপকে গ্রীডের আওতায় আনা হবে
দেশের গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ সন্দীপকে জাতীয় বিদ্যুৎগ্রীডের আওতায় আনা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের তলদেশ দিয়ে ৮০ কিলোমিটার সাবমেরিন বিদ্যুৎকেবল স্থাপনের মাধ্যমে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীড থেকে দ্বীপটিতে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হবে। এছাড়াও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৫ জেলায় নতুন করে দেড় হাজার কিলোমিটার বিদ্যুতের নতুন লাইন নির্মাণ ও ৩ হাজার কিলোমিটার লাইনের স্থাপন করা হবে। এ জন্য এক হাজার ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। বিদ্যুৎ উল্পুয়ন বোর্ড (পিডিবি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এ বিপুল ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৩০ কোটি আর মাত্র ২৪ কোটি টাকা পিডিবির তহবিল থেকে যোগান দেবে। শিগগির এ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সরকার চুড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে চট্টগ্রামে তেরশ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়া হয়। সরকার মনে করে বর্তমানে জাপান ও চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশের চট্টগ্রামে শিল্পায়নের যে প্রস্তাব রয়েছে তাতে আগামী ২০২১ সালের মধ্যেই ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হতে পারে। বর্ধিত এ চাহিদা পহৃরনের জন্য সরকারি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ প্রকল্পটি হাতে নিচ্ছে। এছাড়াও সম্প্রতি অনুমোদন পাওয়া মাতারবাড়ি ১২শ মেগওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ১ হাজার ৩০০ ও কোরিয়ার একটি কোম্পানির ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের আরো একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কিছু বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে।
এসব প্রকল্পের আগে বিতরণ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সঞ্চালনে আরো বড় ধরণের প্রকল্প নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প প্রাক মূল্যায়ন কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়। সভায় সন্দীপের জন্য সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনে বিদুৎ বিভাগ কোনও ধরণের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে কীনা জানতে চেয়েছে। এটি প্রযুক্তি নির্ভর ও আধুনিক কাজ। কমিশন মনে করে এ ধরণের কাজ দেশে নতুন। এর আগে এ ধরণের কাজ খুব বেশি হয়নি। তাই সম্ভাব্যতা যাচায়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পে সন্দীপকে জাতীয় বিদ্যুৎগ্রীডে যুক্ত করতে ৮০ কিলোমিটার মেরিন ক্যাবল স্থাপনে প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ১৬ কিলোমিটার করে ৫টি সার্কিটের মাধ্যমে এ ক্যাবল স্থাপন করা হবে। সাবমেরিন ক্যবলের জন্য ৩৩/১১ কেভির ৯টি নতুন সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে। সূত্র জানায়, প্রকল্পটি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবন এ পাঁচ জেলার ২০টি বিদ্যুৎ বিতরণ এলাকায় বাস্তবায়িত হবে। এর মাধ্যমে ২৬২ কিলোমিটার ৩৩ কেভি, ৩১৪ কিলোমিটার ১১ কেভি, ৩২৭ কিলোমিটার ১১/০.৪ কেভি এবং ৬২৬ কিলোমিটার শুন্য দশমিক ৪ কেভির বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হবে। সবমিলে এক হাজার ৫২৯ কিলোমিটারের নতুন লাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৩৩ কেভির ৬৪১ কিলোমিটার, ১১ কেভির ৬৬৭ কিলোমিটার, ১১/০.৪ কেভির ৬৩৬ কিলোমিটারসহ মোট ৩ হাজার ৬১ কিলোমিটারের নতুন লাইন সংস্কার করা হবে। এছাড়া তেরটি সাবস্টেশন নির্মাণ ও সংস্থার ১ হাজার ৪৪৬টি ট্রান্সফরমার সংগ্রহ ও স্থাপন এবং এক হাজার ৫৩ ট্রান্সফরমার সংস্কার করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণে বিদ্যমান ব্যবস্থার গুণগত মান ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ণ হবে। আবাসিক ও শিল্প কারখানায় নতুন সংযোগ দেওয়া যাবে। এছাড়াও বিদ্যুৎ সরবরাহের স্থায়ী ও নির্ভরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সিস্টেমলস কমে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।