সাশ্রয়ী না হলে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ
প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ-জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেছেন, আইন করে নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি ব্যবহারে বাধ্য করা হবে। আইনের মাধ্যমে জ্বালানি ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী করে গড়ে তুলতে হবে। যারা নিদিষ্ট শর্ত পূরন করে সাশ্রয়ী হবে না তাদের জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হবে। এজন্য প্রয়োজনে নতুন আইন করা হবে।
জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে শনিবার পেট্রোসেন্টারে পেট্রোবাংলা আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন।
জ্বালানি সচিব আবু বক্কর সিদ্দিকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিদ্যুৎ জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান এআর খান, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুরসহ অন্যরা বক্তৃতা করেন।
এ বছর দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘জ্বালানি সাশ্রয়, আমাদের অঙ্গীকার’। দিবসটি উপলক্ষে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি জাতীয় প্রেসক্লাবে এসে শেষ হয়। র্যালিতে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে জ্বালানী খাতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানী লিমিটেড (বাপেক্স)- কে ‘জ্বালানী পদক ২০১৪’ দেয়া হয়। সেমিনারের শুরুতে ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের স্মরণে এক মিনিট নিরাবতা পালন করা হয়।
সেমিনারে উপদেষ্টা বলেন, সাশ্রয়ী ব্যবহার হলে এক তৃতীয়াংশ জ্বালানির সাশ্রয় হতো। অনেক বছর ধরে অনুরোধ করা হচ্ছে জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য। এখন সময় এসেছে আইনের মাধ্যমে সময় বেধে দিয়ে বাধ্য করার। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে আহবান জানান তিনি। তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে অনেকে সমালোচনা করলেও অর্থনীতি এগিয়ে নিয়েছে এসব কেন্দ্র। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমরা মর্যাদাভিত্তিক সমুদ্রসীমা নির্ধারন করেছি।
বিদ্যুৎ জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, কয়লা মাটির নিচে রেখে লাভ নেই। আগামী দিনে কিভাবে ব্যবহার করবো এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জ্বালানি তেলের ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য একটি আধুনিক তেল শোধনাগার গড়ে তুলতে হবে। সিদ্ধান্তহীনতা এবং ঠিক নেতৃত্বের কারনে এতোদিন বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল। আমাদের অনেক সম্পদ আছে। এর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে মধ্যম আয়ের নয়, উন্নত দেশে পরিনত হবে। আগামী ২৭ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্র হবে। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন ৮/১০ টি বিদেশী বিনিয়োগকারী মন্ত্রণালয়ে এসে দেখা করে। এই দেশকে বিনিয়োগের জন্য তারা নিরাপদ মনে করে। যা কয়েক বছর আগেও ছিলো না।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সাশ্রয়ী নয়। তাই, ক্যাপটিভ পাওয়ারের গ্যাস সরবরাহ না দিয়ে সেই গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা উচিত। তাতে দেশের জন্য মঙ্গল হবে।
স্বাগত বক্তব্যে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বলেন, বঙ্গবন্ধু দুরদর্শী নেতা ছিলেন। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের প্রথমেই জ্বালানিখাতকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সে কারণে আজও অনেকটা স্থিতিতে আছে বাংলাদেশ। গত পাঁচ বছরে দৈনিক ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। বিবিয়ানা, শাহবাজপুর ও বেগমগঞ্জ থেকে আরও ৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের প্রস্ততি আছে। কারিগরি কারণে এসব ক্ষেত্র থেকে বাড়তি গ্যাস তোলা যাচ্ছে না।