সিএনজি ও ক্যাপটিভে আর গ্যাস নয়
নতুন সিএনজি স্টেশন ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে আর গ্যাস দেয়া হবে না। আবাসিকে রান্নার কাজে গ্যাস দেয়া হবে না বলে মৌখিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিএনজিতে গ্যাস না দেয়ার এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অনুৎপাদনশীল খাতে গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে আনা শুরু হল। এখন থেকে বিদ্যুৎ ও উৎপাদনশীল কাজেই শুধু গ্যাস ব্যবহার করা হবে। গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে এজন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে আনা শুরু করেছে সরকার। আগামী কয়েক বছর পরে গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকবে। আমদানির ওরপ নির্ভর করেই চলতে হবে।
সূত্র জানায়, যে ৫৪টি সিএনজি ষ্টেশনে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল সেখানেও আর গ্যাস দেয়া হবে না। যে স্টেশনগুলো আছে সেগুলোকেও আর চাহিদা বাড়ানোর সুযোগ পাবে না। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সিএনজি’র ব্যবহার বন্ধ করা শুরু হল। একই সাথে পর্যায়ক্রমে গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর করাও বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যে গাড়ি ইতিমধ্যে সিএনজিতে আছে শুধু তারাই এই গ্যাস পাবে।
সিএনজি স্টেশন মালিকরা প্রতিশ্রুতি পাওয়া স্টেশনে গ্যাসের সংযোগ দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছে। অনেকে প্রতিশ্রুতি পেয়ে যন্ত্রাংশ আমদানি করেছেন বলেও জানিয়েছেন।
নতুন গাড়ির পরিবেশ বাল্পব্দব জ্বালানি সরবরাহ করার জন্য বোতল গ্যাস বেশি করে আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজধানিতে ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলক বোতলগ্যাসে গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। সিএনজি থেকে এর দামও কম। গাড়ির জন্য বোতল গ্যাসের ব্যবহার আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
কয়েকবছর আগে জ্বালানি বিভাগ থেকে গঠন করা উচ্চ পর্যায়ের এক কমিটি পর্যায়ক্রমে অনুৎপাদনশীলখাতে গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছিল। শুধু শিল্প অর্থাৎ উৎপাদনশীলখাতেই গ্যাসের ব্যবহার করলে এর সর্বোত্তম ব্যবহার হবে বলে বলা হয়। দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞরাও একাধিকবার এই একই সুপারিশ করেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন সে সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গাড়ি চালাতে গ্যাসের ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হবে। গাড়ির জন্য বোতল গ্যাস কীভাবে বেশি সরবরাহ করা যায় সে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বেসরকারি উদ্যোক্তারা এটা করছে। তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে। কোন নিয়ন্ত্রণ করা হবে না। তিনি বলেন, সিএনজিতে নতুন করে গ্যাস না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আবাসিকেও পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে। এই দুই খাত থেকে প্রায় ১৮ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার কমানো যাবে। শিল্পসহ ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই গ্যাস ব্যবহার করা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। এজন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানে আর নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রয়োজন নেই। সেখানে যে গ্যাস দেয়া হচ্ছে তাও পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হবে। গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এলএনজি আমদানিসহ দেশের মধ্যেও বেশি বেশি গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
দেশে আবিস্কৃত গ্যাসের পরিমান ৩১ দশমিক ৩১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এরমধ্যে নিশ্চিত ২০ টিসিএফ আর সম্ভাব্য মজুদ আছে সাত টিসিএফ। বাকীটা অনিশ্চিত। আবিস্কার হওয়া গ্যাসের মধ্যে প্রায় ১৩ টিসিএফ গ্যাস এই পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। এই হিসাবে নিশ্চিত মজুদ গ্যাস আর আট বছরে শেষ হবে। সম্ভাব্য গ্যাসকে নিশ্চিত করতে পারলে আরও আট বছর চলবে। তবে গ্যাসের উত্তোলন বেড়ে গেলে আরও আগে এই গ্যাস শেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ বর্তমান ধারা বাহিকতায় গ্যাস ব্যবহার করলেও আগামী ১৬ বছরে বাংলাদেশের বর্তমান মজুদ গ্যাস শেষ হয়ে যাবে। মোট গ্যাস ১২ শতাংশ আবাসিকে এবং ছয় শতাংশ সিএনজিতে ব্যবহার হয়।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম বিভাগের অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে গ্যাস থাকলেও কূপের চাপ কমে যেতে থাকবে। তখন উৎপাদনও কমে যাবে। এজন্য এখনই এর ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিকল্পিতভাবে গ্যাস ব্যবহার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ এবং শিল্পে শুধু গ্যাস দিতে হবে। তবে সব বিদ্যুৎ ও শিল্পে নয়। সর্বোত্তম ব্যবহার হয় এমন আধুনিক শিল্পে গ্যাস দিতে হবে। দেশের বেশিরভাগ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরানো। বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে গ্যাস ব্যবহার হয় তা যদি জ্বালানি সাশ্রয়ী কেন্দ্র হত তবে প্রায় দ্বিগুণ উৎপাদন বাড়ত। এছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ বয়লারও পুরোনো। এজন্য জ্বালানি সাশ্রয়ী বয়লার ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
সম্প্রতি ৩৫৫টি শিল্প কারখানায় নতুন গ্যাস ও চাহিদা বাড়ানোর অনুমোতি দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব সংযোগ দেয়া হবে। ভবিষ্যতে শিল্পে নির্দিষ্ট শিল্পপার্কেই শুধু গ্যাস দেয়া হবে। দেশে ১১০টি শিল্প পার্ক তৈরী করা হচ্ছে। সেখানে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ দেয়া হবে।
বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এন্ড কন্ভার্সন ওনার্স এসোসিয়েশনের অন্যত নেতা জাকির হোসেন নয়ন বলেন, গ্যাসের ব্যবহার কীভাবে হবে তা সরকার যেমন ভাল মনে করবে তেমনই করবে। এটা সরকারের নীতি। তবে যাদের গ্যাস দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, যারা যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে তাদের বিষয় বিবেচনা করা উচিত। মানবিক বিষয় বিবেচনা করে প্রতিশ্রুতি পাওয়া স্টেশনগুলোতে সংযোগ দেয়া উচিত। অথবা ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করা উচিত।
এদিকে রোববার শিল্প মন্ত্রনালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় নির্মাণাধীন অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) শিল্পপার্কে গ্যাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।