বিবিয়ানা মেরামতে, সিএনজি স্টেশন বন্ধ, ভোগান্তিতে মানুষ
রক্ষনাবেক্ষনের কারণে বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্র বন্ধ আছে। এজন্য রাজধানিসহ আশেপাশের এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতে গ্যাম কম দেয়া হচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও কমেছে। আগামীকাল পর্যন্ত এই সংকট চলবে।
এদিকে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সিএনজি স্টেশন ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। ঈদের ছুটিতে রাজধানীবাসী গ্রামাঞ্চলে থাকায় আবাসিক এলাকায় খুব বেশি সংকট হচ্ছে না। শিল্পকারখানাও আজ থেকে খুলেছে। আগামীকাল বৃহষ্পতিবার শিল্প, বাণিজ্য ও আবাসিকের সংকট প্রকট হতে পারে।
এই সংকট সাময়িক বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আর শেভরণ বলছে, ঈদের ছুটিতে চাহিদা কম থাকে বলে এ সময় মেরামত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শেভরণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৯শে জুন রাত ১২টা পর্যন্ত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ সমস্যা আরও একদিন থাকবে। তবে বুধবারের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
উল্লেখ্য, দেশের মোট উৎপাদিত গ্যাসের অর্ধেকই হয় বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে। এখন দৈনিক গড়ে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা হয়। এরমধ্যে বিবিয়ানা থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট। এখন বিবিয়ানার এই ১২০ কোটি ঘনফুট পুরোটা বন্ধ। দৈনিক মাত্র ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিয়ে চলছে দেশ।
এর আগে ২০১৫ সালে বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্র এমনই ঈদের সময় মেরামতের কারণে বন্ধ রাখা হয়েছিল।
সংকট
আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সিএনজি স্টেশন। ঈদের ছুটির পর প্রথম দিনই গ্যাসের অভাবে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। গণপরিবহণ সংকট থাকায় দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরাও। বিদ্যুতে ৫০ থেকে ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম দেয়া হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেগেছে। গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংকট শুরু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার রাতে পেট্রোবাংলা থেকে গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, সারা দেশের সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ ২৪ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হবে। রাজধানীসহ আশপাশের প্রায় ৬০ শতাংশ স্টেশনের জন্য এই আদেশ দেয়া হয়। ঈদের ছুটির সময় কল-কারখানায় গ্যাসের ব্যবহার কম থাকায় গ্যাসক্ষেত্রের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এ সময়কে বেছে নেয়া হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টা বাসা-বাড়িতে সীমিত আকারে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এদিকে মঙ্গলবার রাতে এই ঘোষণা আসার পর পরই গ্যাসের জন্য ফিলিং স্টেশনগুলোতে ভিড় লেগে যায়। কিন্তু রাত ১২টায় ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দেয়ায় গ্যাস না পেয়েই অনেককে ফিরে যায়।
আজ বুধবার সারাদিন ফিলিং স্টেশনগুলোয় গ্যাস বন্ধ থাকায় ঈদ করে ঢাকায় ফেরা মানুষ সমস্যায় পড়ে। মন্ত্রী আগে থেকে জানিয়ে আসার কথা বললেও ভুক্তিভোগী অনেকেই বলেছেন, ২৭শে জুন রাত থেকে গ্যাস বন্ধ থাকবে এমন খবর তারা আগে শোনেননি। ফলে ঈদের ছুটির পর অফিস খোলার প্রথম দিনই সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
ছুটির পর এই সময়ে ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা এমনিতেই কম থাকে। তার মধ্যে গ্যাসের অভাবে বুধবার সকাল থেকে অটোরিকশার সংখ্যাও কম দেখা গেছে। আগের রাতে যারা গ্যাস নিতে পেরেছে তারা সকালে অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়েছেন। তবে তারাও দ্বিগুণ ভাড়া চাইছেন। অনেকেই ঈদের ছুটির কারণে বাইরে থাকায় জানতেই পারেনি, মঙ্গলবার রাত ১২টায় সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে সকালে গাড়ি নিয়ে বের হয়েই বিপদে পড়ে হয়।
প্রতিমন্ত্রীর কথা
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গ্যাস উৎপাদন বন্ধ আছে। এ কারণে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। এটা সাময়িক সমস্যা। এটা বেশিক্ষণ নয়, ২৪ ঘণ্টার জন্য।
আজ বুধবার সকালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, যেসব গাড়ি সিএনজিতে চলে, সেগুলো তেলেও চালানো যায়। ফলে বড় কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় চিন্তা ছিল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে। সেখানে গ্যাসের কারণে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু তারপরও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।
তিতাসের বক্তব্য
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মশিউর রহমান এনার্জি বাংলাকে বলেন, বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের ৮০ শতাংশ গ্যাসই ব্যবহার করে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মাধ্যমে। ফলে বৃহত্তর ঢাকা, বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলায় সংকট মোকাবেলায় সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। তাই এই এলাকায় সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাথা হয়েছে। এটি সাময়িক সমস্যা। বুধবারের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে আশা করছেন তিনি। আর এই সময় গ্যাস সমস্যা হবে বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান।
শেভরণের বক্তব্য
বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্র পরিচালনা করে শেভরন বাংলাদেশ। তারা জানায়, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষনের অংশ হিসেবে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছে। ২৯ শে জুন রাত ১২টা পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলবে। পেট্রোবাংলার সঙ্গে আলোচনা করেই ঈদের ছুটির মধ্যে এই গ্যাসক্ষেত্রের রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। দ্রুততার সাথে আবার উৎপাদন শুরুর কাজ চলছে বলে জানানো হয়।