সিএনজি স্টেশনে লম্বা লাইন
আবাসিকের পাশাপাশি সংকট চলছে সিএনজি স্টেশনেও। প্রায় সারা দিনই গ্যাসের চাপ থাকছে না স্টেশনে। একারণে গাড়িতে গ্যাস নিতে লম্বা লাইনে থাকতে হচ্ছে চালকদের। রাজধানি জুড়েই সিএনজি স্টেশনে এই অবস্থা। কোন কোন স্টেশন বন্ধ করে রাখতে হয়েছে। চাপ কম থাকায় মোটেই গ্যাস দিতে পারছে না তারা। তবে উচ্চচাপের পাইপ থেকে যেসব স্টেশনে সংযোগ নেয়া হয়েছে সেখানে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক।
উত্তরা ১ নম্বর সেক্টর প্রধান সড়কের পাশে ডিএল ফিলিং স্টেশন ও মাসুদ হাসান ফিলিং স্টেশন। সকাল থেকে লম্বা লাইন। লাইন চলে যায় এপিবিএন, র্যাব-১ এর কার্যালয়ের সামনে হয়ে জসিমউদ্দিন রোড় পর্যন্ত। রাস্তায় লম্বা লাইনের কারণে যানজটও তৈরি হচ্ছে।
ডিএল এর সার্ভিসিং ইঞ্চিনিয়ার আফজাল হোসেন উজ্জল জানান, বেশ কিছু দিন গ্যাসের চাপ কমেছে। এজন্য গাড়িগুলোকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। যেখানে একটি গাড়িতে গ্যাস দিতে এক দুই মিনিট লাগতো সেখানে এখন লাগে সাত আট মিনিট। তাছাড়া চাপ কম থাকার কারলে গ্যাসও ঠিকমত ঢুকছে না। ঐ স্টেশনে গ্যাস নিতে আসা ৩১৮৮৩১ নম্বর গাড়ির চালক জাকির হোসেন বলেন, প্রায় দুই ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে থেকে গ্যাস নেয়ার সুযোগ পেলাম।
এদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রেখে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। চাঁদপুরসহ কয়েকটি বিদ্যুৎে কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বাখরাবাদ গ্যাস পাইপ লাইনের কাজও প্রায় শেষ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুত এই অবস্থার সমাধান হবে।
দৈনিক বাংলার নাভানা সিএনজি স্টেশনে দুপুর ১২টায় দেখা গেল লম্বা গাড়ির লাইন। গাড়ি আসছে কিন্তু ঠিক মত গ্যাস নিতে পারছে না। চাপ এত কম যে এখানে মাত্র একটি পাইপ দিয়ে গাড়িতে গ্যাস দেয়া হচ্ছে। অন্যগুলো বন্ধ। স্বাভাবিক দিনে গ্যাসের চাপ থাকে ২০০ পিএসআই। কিন্তু সোমবার ছিল ১২০ এরও কম। এরফলে গাড়িতে গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না। কোন কোন চালক এই চাপের গ্যাস নিতেও সম্মত হচ্ছেন না। চাপ কম থাকার কারণে অনেক সময় নিয়ে একএকটি গাড়িতে গ্যাস দিতে হচ্ছে। এই ফিলিং স্টেশনে কর্মরত মো. সাইদুর রহমান বলেন, গত তিনদিন এই অবস্থা। একেবারেই চাপ নেই। রাতে একটু চাপ বাড়ে। কিন্তু দিনের বেলা একেবারেই থাকে না।
মগবাজার মোড়ের সিএনজি স্টেশনেও দেখা গেল একই অবস্থা। এক সরকারি গাড়ি চালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, গাড়িতে যে পরিমান গ্যাস কয়েক মিনিটে নিয়ে থাকি সেই গ্যাস দুই দিনে নিতে হলো। প্রথম দিন রোববার অর্ধেক গ্যাস নিতে হয়েছিল। এরপর সোমবার আবার নিতে হল। তবে রোববার থেকে সোমবার গ্যাসের চাপ মনে হয় একটু ভাল।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সংকট নিয়ে জানিয়েছেন, গ্যাস সরবরাহ কিছুটা কম। চাহিদা অনুযায়ি গ্যাস সরবরাহ কম বলে সংকট তৈরী হয়েছে। দিন দিন গ্যাস কমে যাচ্ছে এটাই বাস্তবতা। তবে আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশের ৭০ ভাগ চুলা যাতে এলপি গ্যাসে জ্বলে সে ব্যবস্থা করা হবে। সে জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তখন আর সমস্যা থাকবে না।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (তিতাস গ্যাস) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী নওশদ ইসলাম জানান, গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা কম আছে। কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রেখে সেই গ্যাস দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে চাঁদপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। আশা করছি এতে দ্রুত সময়ে রাজধানির গ্যাসের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তিনি বলেন, বাখরাবাদ পাইপ লাইনের যে সমস্যা ছিল তা সমাধান হয়েছে। মেরামতের কাজ প্রায় শেষ। এরফলেও যে সমস্যা হয়েছিল তা আর থাকবে না। বাখরাবাদ পাইপ লাইনে কিছু ময়লা জমেছে। তা পরিস্কার করা হয়েছে।
তিতাস সূত্র জানায়, আগের মতই গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। রোববার ২৭৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছিল। সোমবার সরবরাহ করা হয়েছে ২৬৬ কোটি ঘনফুট। প্রায় আট কোটি ঘনফুট কম সরবরাহ করা হয়েছে। রোববার বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেয়া হয়েছে ১০০ কোটি এবং সার কারখানায় ২৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস। কিন্তু সোমবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেয়া হয়েছে প্রায় ৯৩ কোটি এবং সার উৎপাদনে ২৩ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুতে প্রায় আট কোটি ঘনফুট গ্যাস কম দিয়ে তা আবাসিকসহ অন্য দিকে সরবরাহ করা হয়েছে।
সিএনজি ওনার্স এসোসিয়েশন এর উপদেষ্টা জাকির হোসেন নয়ন বলেন, শীতে গ্যাসের উৎপাদন একটু কম হয়। আবার চাহিদা বেশি থাকে। এজন্য এই তিন মাস সমস্যা থাকে। যেসব সিএনজি স্টেশন ১৪০ পিএসআই পাইপ লাইন থেকে সংযোগ নিয়েছে তাদেও চাপ মোটামাটি স্বাভাবিক আছে। কিন্তু যাদের সংযোগ ৫০ পিএসআই এর লাইন থেকে নেয়া তারা অনেকেই গ্যাস পাচ্ছে না। তাদের স্টেশন প্রায় বন্ধ রাখতে হচ্ছে।