সিত্রাং কেড়ে নিল ১০ প্রাণ
বিডিনিউজ:
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের মধ্যে গাছ ভেঙে পড়ে এবং দেয়াল ধসে দেশের ছয় জেলায় অন্তত দশজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।
ভারি বর্ষণ আর স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সঙ্গী করে সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’। এর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই ঝড়ো হাওয়া আর ভারী বর্ষণ শুরু হয় উপকূলের জেলাগুলোতে।
সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন উপকূলীয় জেলায় গাছ ভেঙে সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর আসতে থাকে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে বহু এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়।
এর মধ্যে ভোলার দৌলতখান ও চরফ্যাশন, নড়াইলের লোহাগড়া এবং বরগুনা সদর উপজেলায় গাছ ভেঙে চারজনের মৃত্যু হয়।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ঝড়ো বাতাসে ঘরের ওপর গাছ পড়ে প্রাণ যায় এক দম্পতি এবং তাদের চার বছরের শিশুর।
সিরাজগঞ্জের সদরে যমুনা নদীর একটি খালে নৌকা ডুবে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়।
ঝড়ের সময় ঢাকার হাজারীবাগেও দেয়াল ধসে এক রিকশাচালকের মৃত্যুর খবর দিয়েছে পুলিশ।
কুমিল্লায় তিন মৃত্যু
ঝড়ের মধ্যে রাত ১১টার দিকে নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়নের হেসাখাল পশ্চিম পাড়ায় গাছ ভেঙে ঘরের উপর পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- হেসাখাল পশ্চিম পাড়া গ্রামের নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথী এবং তাদের মেয়ে চার বছরের শিশু নুসরাত আক্তার লিজা।
হেসাখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল বাহার বলেন, “ঝড়ো বাতাসে বড় একটি গাছ উপড়ে তাদের ঘরের ওপর পড়ে। পরে ভেতর থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।”
নাঙ্গলকোট থানার ওসিফারুক হোসেন বলেন, ঘরের ওপর পড়া গাছটি সরানোর চেষ্টা কছেন তারা। ওই তিনজন ছাড়া আরও কেউ চাপা পড়েছে কি-না, তা খুঁজে দেখা হচ্ছে।
ভোলায় নিহত ২
ঝড়ের মধ্যে গাছ ভেঙে পড়ে ভোলার দৌলতখান ও চরফ্যাশন উপজেলায় দুইজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
দৌলতপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঝড়ে পৌরসভায় একজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন।
নিহত নারীর নাম বিবি খাদিজা (৮০) বলে জানা গেছে। তিনি দৌলতখান পৌরসভায় মৃত গোলাম মোস্তফার স্ত্রী।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘরের ওপর গাছ পড়লে ওই বৃদ্ধা নিচে চাপা পড়েন। আত্মীয়-স্বজনরা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চরফ্যাশনের ইউএনও আল নোমান বলেন, সেখানে আলম স্বর্ণকার নামে এক ব্যক্তি ভেঙে পড়া গাছের ডালের সঙ্গে আঘাত পেয়ে নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার এওয়াজপুর এলাকার বাসিন্দা।
পরিবারের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তিনজন মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। পথে ঝড়ে একটি গাছের ডাল ভেঙে পড়েছিল। চালক ডালের নিচ দিয়ে গিয়ে নিজেকে বাঁচাতে পারলেও আলম ডালে আঘাত পান।
তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সিরাজগঞ্জে মা ও ছেলের মৃত্যু
ঝড়ের সময় সিরাজগঞ্জ সদরে যমুনা নদীর একটি খালে নৌকা ডুবে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্বমোহন ও শিল্পপার্কের মাঝামাঝি এলাকার খালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বৈঠাচালিত নৌকাটি শিল্পপার্ক থেকে পূর্বমোহনপুরে যাচ্ছিল।
মৃত দুজন হলেন– উপজেলার পূর্বমোহনপুর গ্রামের খোকনের স্ত্রী আয়েশা খাতুন (২৮) এবং তার ছেলে আরাফাত হোসেন (২)।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি মোসাদ্দেক হোসেন জানান, ওই নৌকায় চড়ে মোট ছয়জন পূর্বমোহনপুরে তাদের বাড়িতে ফিরছিলেন। মাঝপথে ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে নৌকাটি ডুবে যায়।
“আরাফাত মায়ের কোলে ছিল, সে নদীতে ডুবে মারা যায়। স্থানীয়রা আয়েশা খাতুনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। তবে নৌকায় থাকা অন্যরা সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হনে।”
নড়াইলে নারীর মৃত্যু
ঘূর্ণিঝড় উপকূলে পৌঁছানোর আগেই দুপুরে ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে বলে লোহাগড়া থানার ওসি মো. নাসির উদ্দীন জানান।
নিহত মর্জিনা বেগম (৪০) বাগেরহাট সদর উপজেলার অর্জনবাহার গ্রামের বাসিন্দা। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ১১ বছরের ছেলেকে নিয়ে তিনি লোহাগড়া পৌর এলাকার রাজপুর গ্রামের আবদুল গফ্ফারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন বিভিন্ন বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন তিনি।
দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বর দিয়ে যাওয়ার সময় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সামনে পৌঁছালে একটি মেহগনি গাছের ডাল ভেঙে তার মাথায় পড়ে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। লোকজন তাকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাদিরা ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার মাথায় আঘাত ছিল।
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজগর আলী বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। নিহতের পরিবারকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
বরগুনায় শতবর্ষী বৃদ্ধার মৃত্যু
বরগুনা সদর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে গাছের নিচে চাপা পড়ে শতবর্ষী এক বৃদ্ধার প্রাণ গেছে।
সোমবার রাত সাড় ৮টার দিকে উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাখালী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাওসার হোসেন জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাইন উদ্দীন ময়না জানান, ওই নারীর নাম আমেনা খাতুন। সন্ধ্যার আগেই তার পরিবারের সদস্যদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা রাজি হননি। এমনকি আমেনা খাতুন তার স্বজনদের ঘরেও যাননি।
“উনি ছোট্ট একটি ঘরে একা থাকতেন। ঘরের পাশে থাকা চাম্বল গাছ উপড়ে পড়লে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পরে স্বজনরা গাছ সরিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে।”
ইউএনও কাওসার হোসেন বলেন, “আমরা আমেনা খাতুনের বাড়ি গিয়ে বিস্তারিত জেনেছি। তার দাফনসহ সার্বিক সহযোগিতা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে।”
ঢাকায় রিকশাচালকের মৃত্যু
সিত্রাংয়ের প্রভাবে বৃষ্টি আর ঝড়ের মধ্যে ঢাকার হাজারীবাগে দেয়াল ধসে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় জিগাতলার মনেশ্বর রোডে এ ঘটনায় আহত হয়েছেন এক মোটর সাইকেল চালক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, স্থানীয় লোকজন দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এলে রিকশাচালককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই ব্যক্তির নাম পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
আহত মোটর সাইকেল চালককে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
হাজারীবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এনামুল হক খন্দকার বলেন, “ঘটনার সময় বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। নিহত ব্যক্তি রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন বাইক আরোহী। তখন চারতলা একটি ভবনের ছাদের রেলিং ধসে পড়ে।”