সুন্দরবন ও লাউয়াছড়া বনে বারবার আগুন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সুন্দরবন ও লাউয়াছড়া বনে বারবার আগুন লাগছে। পুড়ে যাচ্ছে গুল্ম লতা গাছ।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসেরভারানি টহল ফাঁড়ি এলাকায় লাগা আগুন ৩০ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। আর এই নিয়ন্ত্রণের পরের দিনই আবার আগুন লাগে বনের দক্ষিণভাগে।
আগুনে বনের ‘এক দশমিক ৩১ একর’ বনভূমি পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে বলা, গেওয়া ও লতাগুল্ম জাতীয় গাছপালা।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জয়নাল আবেদিনকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগুনে বনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ শুরু করেছেন তিনি।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, অগ্নিকাÐের কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। ধারণা করা হচ্ছে মাটির নীচে জমে থাকা মিথেন গ্যাসের কারণে আগুন লেগেছে। তবে তদন্ত শেষে নির্দিষ্ট কারণ জানা যাবে।
আগুনে বনের শুকনো লতা পাতা গুল্ম পুড়ে গেছে। ধোঁয়ায় ব্যাপক জায়গা আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগের সাথে যোগ দেয়া স্থানীয়রাও।
গ্রামবাসী কলসি, বালতি, জগ ও হাড়ি নিয়ে পাশের ভোলা নদী থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। অন্য একটি দল আগুন যাতে সুন্দরবনের সব দিকে ছড়িয়ে না যায় সেজন্য আগুনের অংশের মাটি কেটে দেয়া হয়।
ভোলা নদী থেকে আগুন লাগার স্থানের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। দূরে হওয়ায় আগুন নেভাতে সহজে পানি পাওয়া যায়নি। এখানে অন্য কোন পানির উৎস নেই। যার কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়। প্রায় পাঁচ একর এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
বনের ২৪ নং কম্পার্টমেন্টের প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে আগুন লাগে। বাতাসের তীব্রতায় আগুন দ্রæত আশে পাশে ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে ৮ই ফেব্রæয়ারি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকার চার শতক বনভূমি পুড়ে যায়।
লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনে আগুন: তিন কর্মকর্তা দায়ী
মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনে আগুন লাগার ঘটনায় তিন কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়ী। তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে আগুন লাগে।
এবিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়েছে।
প্রতিবেদনে জাতীয় উদ্যানের সুরক্ষায় ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে।
দায়িত্বে অবহেলার জন্য লাউয়াছড়া বন বিট কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, বাঘমারা বন ক্যাম্পের দায়িতপ্রাপ্ত বন প্রহরী মোতাহার হোসেন ও সহযোগী কমিটি লাউয়াছড়া কমিউনিটি টহলদার সদস্য মহসিন মিয়াকে দায়ী করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ মৌসুমের জন্য বনায়নের প্রস্তুতি হিসেবে আগাছা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হচ্ছিল। এখানে বনায়নের মধ্যে বন্য প্রাণীর খাওয়ার উপযোগী গাছও রোপণ করা হবে। তবে ঝোপঝাড় পরিষ্কারের সময় মাটির নিচ দিয়ে যাওয়া গ্যাসলাইনের বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কথাকার কথা। কিন্তু তা উনারা ছিলেন না। আগুন নেভানোর জন্য দায়ী এই তিনজন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেয়নি। বলা হয়েছে, দেড় একর বনে ছোট গুল্ম ও শুকনা পাতা পুড়ে গেছে।
ইচ্ছা করে আগুন লাগার ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বনে ময়লা-আগাছায় কোনোভাবেই আগুন দেওয়া যাবে না বলে আগে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। তাই এখানে আগুন লাগার ঘটনায় নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে।
২৪শে এপ্রিল দুপুরে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের স্টুডেন্ট ডরমেটরি এলাকায় আগুন লাগে। তিন ঘণ্টা পর বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে দেড় একর আয়তনের একটি টিলা পুড়ে যায়।
বার বার লাউয়াছড়ায় আগুনের ঘটনায় বনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্রর মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে।
উদ্ভিদ আর প্রাণীবৈচিত্রের আঁধার ১ হাজার ২৫০ হেক্টরের লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ বন ও জীববৈচিত্র্য কর্মকর্তা মৌলভীবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সারওয়ার ও বন বিভাগের মামলা পরিচালক জুলহাস হাসান।