স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ বিষয়গুলো আরও পর্যালোচনা করতে হবে
সম্পাদকীয়
অন্য সব আলোচনার মধ্যে বিদ্যুৎ জ্বালানি বিনিময়ের বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছে দুই নেতা। বর্তমান বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের মধ্যে এই বিনিময় স্বস্তিদায়ক হবে বটে। তবে স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ বিষয়গুলো আরও পর্যালোচনা করতে হবে।
বিহার থেকে আসাম পর্যন্ত বিদ্যুৎ নিতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহারের প্রস্তাব ভারতের অনেক দিন আগের। এখন দুই নেতা কাটিহার (বিহার) থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর হয়ে বোরনগর (আসাম) পর্যন্ত উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশও যেন এই সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
দুই দেশের বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন সংযুক্ত করতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। বাংলাদেশের গ্রিড লাইন এতে উন্নত হবে আশা করা যায়। যদিও রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার আগেই বাংলাদেশের জাতীয় সঞ্চালন লাইন উন্নত করতে হবে।
তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ট্রানজিট সুবিধার যে প্রস্তাব দিয়েছে ভারত তা কাজে লাগানোর উপায় খুঁজতে হবে। এটা একটা বড় সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন বাজার সৃষ্টি করা যেতে পারে। রপ্তানি আয় বাড়ানো যেতে পারে।
এরমধ্যে বিদ্যুৎকে সংযোগ করা যায় কিনা তা আলোচনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ বাংলাদেশ যে নেপাল ও ভূটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে তা এই সুবিধার মধ্যে ফেলা যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
যদিও নেপাল ভূটানের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আনার বিষয়ে আগেই ভারত বাংলাদেশকে জানিয়েছে। উভয় দেশ বিদ্যুৎখাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের মাধ্যমে নেপাল ও ভূটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির অনুরোধ জানানো হয়। ভারতীয় পক্ষ জানিয়েছে যে, এর জন্য নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই ভারতে বিবেচনাধীন রয়েছে।
দুই নেতা ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন সংক্রান্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন যা বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে অবদান রাখবে। তারা দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করেন। এতে করে বাংলাদেশ ভারত থেকে সরাসরি পরিশোধিত জ্বালানি তেল আনবে। দেশের উত্তরাঞ্চলে তেল পাঠাতে এতে পরিবহন খরচ কম হবে বলে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য তার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে সহায়তা করার জন্য ভারতকেও অনুরোধ করেছে এবং ভারত উভয় পক্ষের অনুমোদিত সংস্থার মধ্যে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি না হলেও কুশিয়ারা নদীর পানি বন্তনের চুক্তি হয়েছে। ১৫৩ কিউসেক করে পানি পাবে বাংলাদেশ। এটা প্রাপ্তি যোগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন পর্যায়ক্রমে উভয় দেশের সকল নদীর পানির সমস্যা সমাধান হবে।
ভারত থেকে প্রয়োজনমত চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা এবং রসুন সরবরাহ করতে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের বাজার ঠিক রাখতে ভারত থেকে যথাযথ আমদানি খুবই প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন। দুই নেতা দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করার কথা বলেছেন।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজ করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তা আশার। এই আলোচনা চালিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো সমাধান করতে হবে।
ঘনঘন এভাবে শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক হলে প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যে যে সমস্যাগুলোও দ্রুত সমাধান হবে। তাই আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।