হাওয়া লেগেও লাগছে না রামপালের পালে

অরুণ কর্মকার:

রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উড়ন্ত পালে হাওয়া লেগেও লাগছে না। বাংলাদেশে এত দীর্ঘ সময় ধরে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের রেকর্ড অবশ্য এখনো সিদ্ধিরগঞ্জের ২১০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিটের দখলেই আছে। তবে ধারণা করা যায়, সেই রেকর্ড রামপালের দখলেই চলে যাবে।
যৌক্তিক-অযৌক্তিক অনেক আলোচনা-সমালোচনার শিকার এই কেন্দ্রটি নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। ২০১৪ সালে শুরু হয় এর নির্মাণ প্রক্রিয়া। এরপর প্রথম ইউনিট চালু হওয়ার সময়সূচি কয়েকদফা পিছিয়ে স্থির করা হয়েছিল জুন ২০২১। তারপর করোনা পরিস্থিতির কারণে তা আর একবার পিছিয়ে করা হয় ডিসেম্বর ২০২১।
সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্র জানায়, আশা করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর অন্যতম প্রধান স্মারক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হবে। কিন্তু তাও হচ্ছে না। অথচ এর প্রায় দুই বছর পর কাজ শুরু হওয়া পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে প্রায় এক বছর হতে চলল।
সূত্রগুলো জানায়, রামপাল কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ (ইপিসি) যাও বা এগিয়েছে, কিন্তু এর জ্বালানি কয়লা আমদানির বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যদিও দীর্ঘমেয়াদে বিপুল পরিমান কয়লা আমদানি ও সময়মত সরবরাহের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল।

* এ বছরও চালু হচ্ছে না প্রথম ইউনিট
* এখনো চুক্তি হয়নি কয়লা আমদানির

এখন সরকারের পক্ষে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের যাবতীয় বিষয় তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নীতিসহায়তা সংস্থা ‘পাওয়ার সেল’। রামপাল কেন্দ্রের নির্মাণকাজে অগ্রগতি ও চালু হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এই সংস্থার মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসাইন বলেন, এ বছর ডিসেম্বরেও কেন্দ্রটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা কম।
কয়লা আমদানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দরপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এখন সেগুলো মূল্যায়নের কাজ চলছে। হয়তো দ্রুতই কার্যাদেশ দেয়া যাবে। তারপর শুরু হবে ঠিকাদারের কাজ। অর্থাৎ কয়লা আনার প্রক্রিয়া।
১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিক ও নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল)। তাঁরা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে থাকলেও সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনকল্যাণমূলক সামাজিক কর্মকা-ে অনেকটাই এগিয়ে। এলাকার মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের সরবরাহ, যা ওই এলাকার মানুষের জন্য এক পরম পাওয়া; এলাকাবাসির নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া; বিনামূল্যে সাধারণ ওষুধ বিতরণ, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাউপকরণ দেয়া প্রভৃতি নানা ধরণের কাজ তারা করে চলেছে।
এদিকে সরকার ইতিমধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে অবশ্য রামপাল কেন্দ্র বাদ পড়ছে না। তবে অন্য অনেক প্রকল্পই বাতিল হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক জানান, পায়রায় বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানির (বিসিপিসিএল) ১৩২০ মেগাওয়াটের যে কেন্দ্রটি চালু হয়েছে সেখানে ওই কোম্পানি একই ক্ষমতার আর একটি কেন্দ্র নির্মাণ করবে। পায়রায় ওই কেন্দ্রের অনতিদূরে আরপিসিএল-নরিনকোর যৌথ উদ্যোগে আর একটি ১৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র নির্মিত হবে। রামপালের কেন্দ্রটি হবে। মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন কেন্দ্রটি হবে। এগুলো সরকারি খাতের। বেসরকারি খাতে এস আলমের বাঁশখালী এবং বরিশালে ৩৫০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র নির্মিত হবে।
অন্য একটি সূত্র জানায়, মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নির্মাণাধীন কেন্দ্রটি ছাড়া একই ক্ষমতার আরও একটি কেন্দ্র স্থাপিত হতে পারে।