হাসিনা-মোদী বৈঠক: জ্বালানিতে আশ্বাস, বাণিজ্যে জোর
বৈশ্বিক সঙ্কটের মধ্যে আকাঙ্ক্ষিত জ্বালানি তেলে পাওয়ার বিষয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কাছ থেকে এক ধরনের আশ্বাস পেয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার নয়া দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাণিজ্য সুসংহত করার বিষয়েও তাদের মতৈক্য হয়।
এদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনে প্রতিবেশী দুদেশ সমঝোতা স্মারক সই করলেও বরাবরের মতোই ঝুলে থাকল তিস্তা নদীর বিষয়ে একই রকমের চুক্তি।
তবে শেখ হাসিনা বলেছেন, তিস্তা চুক্তির জটও অচিরেই খুলবে বলে তিনি আশা রাখছেন।
তিন বছর পর শেখ হাসিনার ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে দুই শীর্ষ নেতা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি একান্তেও আলাপ করেন।
বৈঠক শেষে উভয় দেশের মধ্যে কুশিয়ারা নদীর ১৫৩ কিউসেক করে পানি প্রত্যাহারসহ সাতটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়।
দিল্লিতে কর্মব্যস্ত এই দিনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মু ও উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীন ধনখড়ের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা।
তার দিনের কর্মসূচি শুরু হয় রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে ফুল দিয়ে। এদিন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে নিহত ও আহত ভারতীয় যোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্টুডেন্ট স্কলারশিপ’ তুলে দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
দুপুরের শীর্ষ বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ তার সফরসঙ্গীরা।
এরপর সাংবাদিকদের সামনে এসে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম কোভিড পরবর্তী এবং বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ‘আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার’ অংশ হিসেবে এই সফরের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “দুটো বিষয়ে অগ্রগতি করেছি আলোচনায়। জ্বালানি সহায়তা বিশেষ করে ভারত থেকে ডিজেল সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ক্রয়ের জন্য আমাদের রিলেটেড মিনিস্ট্রি বা ডিপার্টমেন্টগুলো আলোচনা করবে এবং এটার রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে এই পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে।”
ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট জ্বালানি সঙ্কট মেটাতে ভারতের কাছে জ্বালানি তেল চাওয়া হবে বলে আগেই জানানো হয়েছিল। কেননা পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে নিজেদের ভাণ্ডার মজবুত করছে ভারত।
ভারতের উদ্বৃত্ত জ্বালানি তেল পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে শাহরিয়ার বলেন, “জ্বালানির ক্ষেত্রে আমরা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা উদ্বৃত্ত শব্দটা ব্যবহার করিনি। বলেছি, ভারত থেকে আমরা জ্বালানি নিতে চাই। এটা শুধু ডিজেল নয়, গ্যাসের জন্যও বলা হয়েছে।
“এবং ভারত ইতোমধ্যে জানিয়েছেও আমাদেরকে, নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ তৈরি করছে একাধিক ভারতীয় কোম্পানি, যা পরিবেশবান্ধব, কমদামি ও নিরাপদ। তারা নেপালের বিদ্যুৎ তাদের স্ট্রাকচারের মধ্যে নিয়ে এসে তাদের কানেকশন দিতে চান। যেই অঞ্চল দিয়ে দিতে চান এই অঞ্চলে গ্রিড কানেক্টিভিটি নিয়ে নিয়ে হয়ত আমাদের কাজ করতে হবে।”
“এটা নিয়ে কিন্তু বেশ অগ্রগতি আছে। সুনির্দিষ্টভাবে বলার মতো, বা কোয়ানটিফাই করার মতো বা টাইমলাইন দেবার মত নয়। সামনের দিনে আমরা ইমপোর্ট করতে পারব বলে আমরা আশা করি।”
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, জ্বালানিসহ অন্য অনেক বিস্তৃত ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি।
এক টুইটে তিনি আরও বলেন, বৈঠকে আন্তঃযোগাযোগ জোরদার, বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব মজবুত এবং তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি ও অন্য অনেক কিছুতে সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ মোকাবেলায়ও একসঙ্গে কাজ করতে মতৈক্য হয়েছে।
জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলায় রামপালের মৈত্রী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভূমিকা পালন করবে উল্লেখ করে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদী বলেন, জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দাম বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে।
এদিন দুই প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত রামপালের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উদ্বোধন করেন।
সেই প্রসঙ্গ তুলে মোদী বলেন, “আজ মৈত্রী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উদ্বোধন বাংলাদেশে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ প্রাপ্তি সুযোগ বাড়াবে।”
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র যে ক্ষেত্রে পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ তৈরি করেছে, সেই সুন্দরবন সংরক্ষণে পরস্পরের সহযোগী হয়ে কাজ করার কথাও বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্য ও জ্বালানি নিয়ে নিরাপত্তা নিয়ে আমরা কাজ করব, বাংলাদেশ সবসময় অগ্রাধিকার পাবে।”
বাণিজ্য, আঞ্চলিক যোগাযোগ ও স্থিতিশীলতা
দুই প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকে বাণিজ্য সুসংহত হওয়ার আলোচনা হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যার মধ্যে আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশের বহুল প্রতীক্ষিত সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (সেপা) বিষয়টিও।
বৈঠকশেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়ার মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার বাংলাদেশ। এই অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে দ্বিপক্ষীয় সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা) করার আলোচনা দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করতে চান তারা।
দুদেশের সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে মোদী বলেন, “আজ বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী এবং এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। মানুষে মানুষে সংযোগের ক্ষেত্রে অব্যাহত উন্নতি হচ্ছে।
“গত কয়েক বছরে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমি বহু দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি।”
মোদী বলেন, “কোভিড মহামারী ও সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া এবং আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা দরকার।”
বাংলাদেশের পাটের উপর থেকে ভারতে ‘অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি’ উঠিয়ে নেওয়ার বিষয় সমাধানে প্রধানমন্ত্রী মোদী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের পাটের উপর একটা অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি ইমপোজ করা আছে। যদিও আমাদেরকে বলা হয়েছে যে তা সত্ত্বেও ভারতে পাট রপ্তানি বা বাংলাদেশের পাট রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
“কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেশ জোরালোভাবেই এটা উত্থাপন করেছেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার দপ্তরকে বা অন্যান্য দপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছেন এই বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার জন্য।এই বিষয়ে প্রয়োজনে আমাদের সাথে আলোচনা করার জন্য।”
ভারত ও বাংলাদেশের পাশাপাশি পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী।
শেখ হাসিনা বলেন, গত ৫০ বছরের গড়ে ওঠা শক্তিশালী অংশীদারিত্বের উপর ভর করে উভয় দেশ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিস্তৃত সব বিষয় নিয়ে কাজ করছে।
“আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখা এবং দুদেশ ও এ অঞ্চলের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমি ও প্রধানমন্ত্রী মোদী একমত হয়েছি।”
নরেন্দ্র মোদী তার বক্তৃতায় বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার বিষয়ে তারা জোর দিয়েছেন আলোচনায়।
“১৯৭১ সালের আদর্শকে জীবন্ত রেখে এই ধরনের শক্তিকে সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করা জরুরি, যারা আমাদের পারস্পরিক বিশ্বাসকে আঘাত করতে চায়।”
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকার কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং ওই অঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ইতোমধ্যে বলেছেন বলে বলে উল্লেখ করেন শাহরিয়ার আলম।
“ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, বাংলাদেশের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতার কথা যে, নর্থ ইস্টের স্টাবিলিটির জন্য বাংলাদেশ যে কাজ করেছে।”
শেখ হাসিনার সফর নিয়ে এক টুইটে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, এই বন্ধুত্ব কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ এবং ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির সংযোগস্থলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আশ্বাস
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কাজ করার বিষয়ে ভারতের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়া গেছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে বর্তমানে যে অস্থিরতা চলছে, সে বিষয়ে ভারতও ’ওয়াকিফহাল’।
“প্রত্যাবাসনের আলোচনাটি যে বিভিন্ন পর্যায়ে এসে থেমে গেছে এটা যাতে পুনরায় চালু হয় এ ব্যাপারে তারা তাদের অবস্থান থেকে সহযোগিতা করবেন।”
বাংলাদেশ ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভার বহন করেছে অনেক বছর হল। এই শরণার্থীদের তাদের দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা গুরুত্ব তুলে ধরে আসছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার দাবি বাংলাদেশ পুনর্ব্যক্ত করেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে হত্যা আগের তুলনায় অনেকখানি কমে এসেছে।
“হঠাৎ হঠাৎ ঘটনা পীড়া দেয় এবং সেটা আলোচনা হয়। কিন্তু এটাকে শূন্যের কোঠায় এবং ওই ঘাতক অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করার যে প্রতিশ্রুতি, সেই বিষয়টি পুনরুচ্চারিত করা হয়েছে।”
কুশিয়ারার সমঝোতা স্মারক, ঝুলে থাকল তিস্তা
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কুশিয়ারা নদীর ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ও ভারত একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। তবে প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তির বিষয়টির সুরাহা হয়নি।
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ ভারত ও বাংলাদেশের অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধান হবে বলে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমরা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে অনেক অনিষ্পন্ন সমস্যার সমাধান ইতোমধ্যে করেছি। আমি আশা করি তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিসহ অন্যান্য অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো শিগগির সম্পন্ন করতে পারব।
”আমি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানাই, আজকে আমরা কুশিয়ারা ইস্যু সমাধান করেছি এবং আমি আশাবাদী, মোট যে ৫৪টি নদী আছে, সেগুলো… আমি জানি, যতক্ষণ পর্যন্ত মোদী আছেন, বাংলাদেশ-ভারত আমরা সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব।”
তিস্তা চুক্তি নিয়ে অগ্রগতির বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “তিস্তা নিয়ে আমাদের যে প্রয়োজনীয়তা ও এক্ষেত্রে ভারত যে আরেকটু উদার মনোভাব দেখাতে পারে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই এএনআইয়ের সাক্ষাৎকারে বলেছেন।
“সেটা ওইভাবেই আলোচনা হয়েছে এবং আমরা অ্যাশিওরেন্সের জায়গাতেই আছি এখনও এবং আমরা বিশ্বাস করি যে তারা যে প্রতিশ্রুতিটা দিয়েছেন, দেরি হলেও এটা ডেলিভারড হবে।”
শাহরিয়ার বলেন, “আশার কথা হচ্ছে যে আমাদের এই সফরে একটা বড় প্রাপ্তি আমরা অবশ্যই মনে করি যে কুশিয়ারার ১৫৩ কিউসেক পানি। এই পানিটার জন্য কিন্তু আমাদেরকে কিছু দিয়ে যেতে হচ্ছে না। এই ব্যাপারটায় যদি দয়া করে আপনারা (সাংবাদিক) নজরে আনেন।”
কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনের মাধ্যমে যে গতি পাওয়া গেল, তা সামনের দিনে ধরে রাখার ক্ষেত্রে দুপক্ষ একমত হয়েছে বলে জানান তিনি।
৫ প্রকল্প উদ্বোধন, ৭ সমঝোতা স্মারক
ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নির্মিত বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট এবং রূপসা রেলসেতু এদিন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী।
১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয়ের দেড়শ কোটি ডলারের বড় অংশের জোগান দিচ্ছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পটির কাগুজে নাম ‘মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট’।
ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস (বিএইচইএল) এই নির্মাণ কাজ করছে। দেশটির এনটিপিসি লিমিটেড ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে আধাআধি অংশীদারিত্বে এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে।
অন্যদিকে খুলনা থেকে মোংলার পথে রূপসা নদীতে রেল সেতু নির্মাণের কাজ এ বছরের জুলাইয়ে শেষ হয়েছে। সংযোগ রেললাইনসহ এই সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার হলেও মূল রেলসেতুর দৈর্ঘ্য ৭১৬ মিটার।
ভারত সরকারের ঋণে নির্মিত এই সেতুর ফলে খুলনা থেকে মোংলার পথে পণ্য পরিবহনে বেশ সুবিধা মিলবে।
সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের অধীনে কুশিয়ার নদী থেকে বাংলাদেশের ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারসহ সাতটি এমওইউ এদিন সই করেছে উভয় দেশ।
এছাড়া বাংলাদেশের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য নির্মাণ সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি হস্তান্তর, খুলনা-দর্শনা রেলপথ এবং পার্বতীপুর-দর্শনা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পেরও উদ্বোধন ঘোষণা করেন দুই প্রধানমন্দ্রী।
অন্য সমঝোতা স্মারক
বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বিষয়ে ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (সিএসআইআর) সঙ্গে বাংলাদেশের সিএসআইআরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
- বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ভারতের ভোপালে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক।
- ভারতের রেলওয়ের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে বাংলাদেশ রেল কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
- বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যপ্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
- ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ‘প্রসার ভারতীর’ সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সমঝোতা স্মারক।
- মহাশূন্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ে বিটিসিএল এবং এনএসআইএল এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক।