২৮ ফেব্রুয়ারি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে চুড়ান্ত চুক্তি
রামপাল কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ভারতের কোম্পানি ভেলের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি চুড়ান্ত চুক্তি করার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এটি নির্ভর করছে বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমোদনের ওপর।
দরপত্র মূল্যায়নশেষে গত মাসে ভারতের কোম্পানি ভেলকে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন (এনটিপিসি) এর বোর্ড।
সূত্র জানায়, তিন বোর্ডের অনুমোদন পাওয়ার পর গত ৩০ জানুয়ারি ভেলকে চিঠি দিয়ে চুক্তি করতে বলা হয়েছে। শর্ত অনুযায়ি, চিঠি পাওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভেলকে বিআইএফপিসিএল এর সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। এখন বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমোদনের অপেক্ষা।
গতকাল সোমবার ভেলের সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, তিন কোম্পানির অনুমোদন পাওয়া গেছে। কিন্তু চূড়ান্ত চুক্তির আগে চুক্তির খসড়া যাচাই বাছাই করা প্রয়োজন। সেই কাজট্ইি এখন করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিআইএফপিসিএল সূত্র জানায়, আমাদের দিক থেকে সব কাজ শেষ। এখন বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমোদন পাওয়া গেলেই চুক্তি করা হবে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি চুক্তি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমোদন পাওয়া না গেলে তো সেটি করা যাবে না।
গতবছরের ২২ সেপ্টেম্বর রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে তিনটি কোম্পানি দরপ্রস্তাব জমা দেয়। এরমধ্যে যৌথভাবে জাপানের মারুবিনি করপোরেশন ও ভারতের লারসেন এন্ড টুব্রো লিমিটেড এবং চিনের হারবিন ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লি, ফ্রান্সের এএলএসটিওএম ও চীনের ইটিইআরএন। এছাড়া ভারতীয় কোম্পানি ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস্ লিমিটেড (ভেল) এককভাবে দরপ্রস্তাব জমা দেয়। দরপ্রস্তাবের সঙ্গেই কোম্পানিগুলো কেন্দ্র স্থাপনের বিনিয়োগ কারা করবে তার নিশ্চয়তা নিয়ে এসেছে। নিজেদের স্থানীয় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে মৌখিক সমর্থন নিয়েছে।
গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস ধরে দরপ্রস্তাব কারিগরি ও অর্থনৈতিকভাবে মূল্যায়ন করেছে মূল্যায়ন কমিটি। মূল্যায়নে ভেলের দরপ্রস্তাব সর্বনিু হওয়ায় বিআইএফপিসিএল তাদের বোর্ডে এটি অনুমোদন করে। সর্বনিু দরদাতা হওয়ার পাশাপাশি ভেল অর্থানের বিষয়ে নিশ্চয়তা দিচ্ছে। তারা ভারতের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে কেন্দ্রে বিনিয়োগের বিষয়ে মৌখিক সমর্থন নিয়ে এসেছে।
ভেল সর্বনিু দরদাতা হিসেবে কাজ পেলে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে অর্থায়ন করার কথা। সেক্ষেত্রে ওই ব্যাংকের সঙ্গে একটি অর্থচুক্তিও করা হবে। চুড়ান্ত চুক্তি করার তিনমাসের মধ্যে অর্থনৈতিক চুক্তি করতে হবে। অথনৈতিক চুক্তির ৪১ মাসের মধ্যে প্রথম ইউনিট এবং ৪৬ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আনতে হবে। এই হিসেবে কেন্দ্র স্থাপন শেষ হবে ২০১৯ সালের শেষে। রামপাল কেন্দ্রের ৭০ শতাংশ অর্থ ঋণ নেয়া হবে। বাকি ৩০ শতাংশ পিডিবি ও এনটিপিসি যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই কেন্দ্র স্থাপনে আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ২০১ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এর ১৫ শতাংশ হিসাবে ৩০ কোটি ২১ লাখ ৮৪ হাজার ডলার দিতে হবে পিডিবিকে।
অন্যদিকে রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা পরিবেশবান্ধব হবে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে ইউনেসকো থেকে একটি প্রতিনিধি দল খুব শিগগির বাংলাদেশে আসবে। সুন্দরবনের পাশে এই কেন্দ্র করার ফলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে কী না তা তারা পর্যালোচনা করবে। এদিকে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধের দাবিতে তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আগামী ১০ থেকে ১৫ মার্চ সুন্দরবন অভিমুখে জনযাত্রা করবে।