ভোলায় নতুন গ্যাসের সন্ধান

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহবাজপুরে নতুন ৭০০ বিসিএফ গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে বাপেক্স।
আজ মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে জ্বালানি বিভাগ থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তেজগাঁও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সচিবালয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন।
শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র থেকে তিন কিলোমিটার পুর্ব দিকে মাটির সাড়ে তিন কিলোমিটার গভীরে এই গ্যাস ক্ষেত্রর সন্ধান পায় বাপেক্স। আজ সকালেই গ্যাস থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় কর্তৃপক্ষ।

শাহবাজপুর পূর্ব-১ নামের এই অনুসন্ধান কূপটি বাপেক্সের অধীনে খনন করেছে রাশিয়ার কোম্পানি গ্যাসপ্রম। তবে জরিপ থেকে শুরু করে সব ধরণের পরিচালনার দায়িত্ব ছিল বাপেক্স।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম জানান, এটি একটি অনুসন্ধান কূপ। বাপেক্স ত্রিমাত্রিক জরিপ করে প্রথমে এখানে গ্যাস থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে। এরপরই সেখানে কূপ খনন শুরু করা হয়। সাড়ে ৩ হাজার মিটার খনন করা হয়েছে। মটিরে নিচে তিন হাজার ৩০০ মিটার থেকে তিন হাজার ৫০০ মিটারের মধ্যে তিনটি স্তরে এই গ্যাস পাওয়া গেছে।
এটি নতুন গ্যাসক্ষেত্র নাকি পুরানো গ্যাসক্ষেত্রের অংশ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত কোনো একটি গ্যাসক্ষেত্র এক কিলোমিটার ব্যাপী হয়। নতুনটি পুরানো ক্ষেত্রের প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে পাওয়া গেছে। সে হিসেবে আশা করা যায় যে, এটি আলাদা ক্ষেত্র। তবে এখনই তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। এজন্য আরো কিছু কূপ খনন করতে হবে। তবে যদি ক্ষেত্র একটিই হয় তাহলে তা হবে বাংলাদেশের জন্য আরো বড় খবর। তখন ব্যাপ্তিটা হবে আরো বড়। নওশাদ জানান, এই কূপের গ্যাস বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য। কারণ সেখানে এখনই প্রতি ইঞ্চিতে গ্যাসের চাপ ৫০০ পাউন্ড (৫০০ পিএসআই পাউন্ড পার ইঞ্চি) এর উপরে। যা খুবই ভাল লক্ষণ। তবে কি পরিমাণ গ্যাস আছে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। এজন্য আরো অনেক উন্নয়ন কূপ করতে হবে। এতে সময়ও লাগবে। এজন্য আরো পরীক্ষার প্রয়োজন।
এর আগে ২০১৬ সালে ত্রিমাত্রিক জরিপ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ জেলা ভোলায় বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের অবস্থান চিহ্নিত করে।   বিদ্যমান শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে প্রায় ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার ভূগর্ভে গ্যাস থাকার সম্ভাবর কথা জানানো হয় তখন।
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ইউনোকল এক জরিপের ভিত্তিতে শাহবাজপুরে দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস মজুতের সম্ভাবনার কথা বলেছিল। তখন তারা ওই গ্যাস তুলে তা দিয়ে বরিশাল, খুলনা ও যশোর অঞ্চলে সরবরাহের কর্মপরিকল্পনাও সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছিল। পরে ইউনোকলের সঙ্গে সরকারের চুক্তি না হওয়ায় পরিকল্পনাটি আর এগোয়নি।

ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রটি বেঙ্গল বেসিনভুক্ত এলাকায়। সেখানে যে ভূকাঠামোয় গ্যাস পাওয়া গেছে, তার ভূতাত্ত্বিক নাম ‘স্টেটিগ্রাফিক স্ট্রাকচার’। দেশের অন্য সব গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে সুরমা বেসিনে। এই বেসিনের ভূকাঠামোয় ভূতাত্ত্বিক নাম ‘অ্যান্টি ক্লেইন স্ট্রাকচার’।

ভোলায় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য প্রথমে দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করা হয় ১৯৮৬-৮৭ সালে। তাতে গ্যাসের অবস্থান চিহ্নিত করার পর প্রথম অনুসন্ধান কূপটি খনন করা হয় ১৯৯৪ সালে। এরপর আরও তিনটি কূপ খনন করা হয়েছে। এই কূপগুলো থেকে বর্তমানে ভোলায় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে (২২৫ ও ৩৫ মেগাওয়াট) গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া শিল্প ও আবাসিক গ্রাহকদেরও গ্যাস দেয়া হচ্ছে।