আজ ঈদ: মহামারী থেকে মুক্তির প্রার্থনা
নিজস্ব প্রতিবেদক/ বিডিনিউজ:
ঈদ মোবারক। পালিত হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ উল ফিতর। একমাস সিয়াম সাধনার পর বছর ঘুরে এসেছে খুশির ঈদ। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবারও সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদ্যাপন করা হচ্ছে। উন্মুক্ত স্থানের পরিবর্তে প্রথম বারের মতো মসজিদে মসজিদে হচ্ছে ঈদের জামাত। ঈদের প্রধান জামাত হয়েছে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুসল্লিরা আদায় করেছেন ঈদের জামাত। নামাজ শেষে মোনাজাতে মহামারি করোনা থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করা হয়।
আবহাওয়া অফিস বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে রাখলেও ঈদের সকালে তা বাগড়া দেয়নি ঢাকায়। নানা বয়সী মানুষ ঈদ জামাতে অংশ নিতে হাজির হন বায়তুল মোকাররমে।
মহামারীর মধ্যে গতবছরের দুই ঈদের মত এবারও ঈদগাহ বা খোলা ময়দানে ঈদের জামাত করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ঈদের নামাজ মসজিদে মসজিদেই হচ্ছে।
করোনাভাইরাস অতি সংক্রামক বলে এবার বেশ কিছু বিধিনিষেধ মেনে নামাজ পড়তে হয়েছে সবাইকে।
সবাইকে বলা হয়েছে বাসা থেকে ওজু করে মাস্ক পরে মসজিদে যেতে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসা বাধ্যতামূলক। নামাজ শেষে কোলাকুলি বা হাত মেলানোতেও নিষেধ ছিল। তবে ব্যতিক্রমও দেখা গেছে।
প্রথম জামাতে যোগ দিতে সকাল সাড়ে ৬টা থেকেই বায়তুল মোকাররমে আসতে শুরু করে মানুষ। বায়তুল মোকারমের বাইরে ছিল নামাজে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন।
ঈদ জামায়াতে শিশু ও বৃদ্ধদের অংশ না নিতে বলা হলেও দেখা গেছে অনেকে সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ঈদের নামাজে এসেছেন। প্রবীণদেরও বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তে দেখা গেছে।
মাইকে বার বার অনুরোধ জানানো হয়েছে যাতে সবাই দূরত্ব বজায় রেখে বসেন। প্রায় ভর্তি মসজিদের ভেতরে তা যতটা সম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করেছেন সবাই।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে শুক্রবার সকালে ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে মহামারী থেকে মুক্তির প্রত্যাশায় দোয়া করা হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিবায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে শুক্রবার সকালে ঈদুল ফিতরের নামাজে শেষে মহামারী থেকে মুক্তির প্রত্যাশায় দোয়া করা হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিঈদুল ফিতরের সকালে শুক্রবার বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদের বাইরে ছিল নামাজে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিঈদুল ফিতরের সকালে শুক্রবার বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদের বাইরে ছিল নামাজে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিসবাই স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম মানছেন কি না দেখতে মসজিদের প্রবেশ পথে পুলিশ ছিল। তখন সবার মুখে মাস্কও ছিল। তবে নামাজ শেষে মোনাজাতের সময় কারো কারো মুখে আর তা দেখা যায়নি।
বায়তুল মোকাররমে প্রথম জামাতে ঈদের নামাজ পড়েন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস।
নামাজ শেষে সবাইকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে যারা ঈদ করতে ঢাকার বাইরে গিয়েছেন, তারা যেন বিধিনিষেধ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত ঢাকায় না আসেন।
নিরাপত্তা জন্য বায়তুল মোকাররম এলাকায় পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি র্যাবের গাড়িও দেখা যায়। পল্টন থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, পুরো এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন তারা।
এছাড়া পড়া-মহল্লার সব মসজিদেই নিজেদের নির্ধারিত সময়ে ঈদ জামাতে অংশ নিচ্ছেন নগরীর মুসলমানরা।
আবহাওয়া ভালো থাকলে এমনিতে দেশে ঈদের প্রধান জামাতটি হয় ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সেই জামাতে নামাজ পড়েন ঈদের সকালে। গতবছরের মত এবারও তা করা যায়নি মহামারীর কারণে।
প্রতিবছর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের আয়োজন হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় খোলা মাঠে ঈদ জামাত আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় শোলাকিয়া ময়দানেও এবার ঈদ জামাতের আয়োজন নেই।
গতবছরের মত এবারও রোজার পুরোটা সময় দেশে ছিল লকডাউনের বিধিনিষেধ। সবাইকে যার যার কর্মস্থলের এলাকায় থেকে ঈদ উদযাপনের আহ্বান ছিল সরকারের তরফ থেকে।
রুদ্ধ দিনে আসা ঈদের আগের দিনও করোনাভাইরাস বাংলাদেশে কেড়ে নিয়েছে ৩১ জনের প্রাণ। এ পর্যন্ত দেশে মোট ১২ হাজার ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, মোট ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৭ জন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য এসেছে সরকারের খাতায়।