সাগরে বিপুল সম্পদ: প্রয়োজন যথেষ্ট বিনিয়োগ
সম্পাদকীয়:
বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন খনিজসহ নানা সম্পদের বিবরণ দিয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। নানা সম্পদে ভরা সমুদ্র এটা দীর্ঘদিন থেকেই জানা। নানা জরিপে সেই সম্পদের একটা তালিকা পাওয়া গেল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় আর নতুন তথ্য হচ্ছে গ্যাস হাইড্রেট।
এই গ্যাস মূলত উচ্চচাপ ও নিম্ন তাপমাত্রায় গঠিত জমাট বরফের মধ্যে স্তূপ আকারে থাকে। বালুর ভেতরে ছড়ানো স্ম্ফটিক আকারে কিংবা কাদার তলানিতে ক্ষুদ্র পিণ্ড, শিট বা রেখা আকারে থাকে। এই গ্যাস হাইড্রেট থেকে মিথেন গ্যাস পাওয়া সম্ভব, যা ব্যবহারযোগ্য। সাধারণত সাগরের পানির নিচে নির্দিষ্ট গভীরতা এবং চাপে জমাট আকারে এটি অবস্থান করে। সাগরের অগভীর ও গভীর উভয় অঞ্চলে এটা থাকতে পারে। মেরু অঞ্চলের বরফের নিচে বিশাল এলাকায় মিথেন হাইড্রেটের মজুদ রয়েছে। যা হাজার হাজার টিসিএফ গ্যাসের সমপরিমাণ। ৪ অনু মিথেন এবং ২৩ অনু পানির সংমিশ্রণই হচ্ছে এই হাইড্রেট।
সাগরের গভীর থেকে এই মিথেন হাইড্রেটকে তোলার মতো সহজলভ্য প্রযুক্তি আবিস্কারে বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, চীন, ভারত, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ সম্ভাবনাময় গ্যাস হাইড্রেট নিয়ে নানামুখী গবেষণা চলছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীতে বর্তমানে আবিস্কৃত মোট জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়েও গ্যাস হাইড্রেটের পরিমাণ বহু গুণ বেশি। তাপ ও চাপ পরিবর্তন করলে এক ঘনমিটার গ্যাস হাইড্রেট থেকে ১৬০ ঘনমিটার মিথেন গ্যাস পাওয়া যেতে পারে।
মিথেন গ্যাস হাইড্রেট দুনিয়াতে এখনও কেউ সফলভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। এটাকে ‘ভবিষ্যতের সুখবর’ বলা যেতে পারে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে সাগরের গভীর থেকে এই গ্যাস হাইড্রেট তোলার সহজলভ্য প্রযুক্তি আবিস্কার হবে। বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমা থেকে এই সম্পদ তুলতে সক্ষম হবে।
শুধু গ্যাস হাইড্রেড নয় সাথে চিহ্নিত করা হয়েছে অন্যান্য জলজ সম্পদ। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একান্ত সমুদ্র এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির বেশ কিছু মূল্যবান উদ্ভিদজাত এবং প্রাণীজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেট ছাড়াও ২২০ প্রজাতির সি-উইড, ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া এবং ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের কিছু প্রজাতির সি উইডে প্রচুর প্রোটিন আছে যা ফিশ ফিড হিসেবে আমদানি করা ফিশ অয়েলের বিকল্প হতে পারে। আবার কিছু প্রজাতি অ্যানিমেল ফিডের মান বাড়াতে ব্যবহার হতে পারে। কসমেটিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয় এমন কিছু উপাদান পাওয়া যায় এমন সি উইডও অনেক পাওয়া গেছে সমুদ্রে।
গ্যাস হাইড্রেট ব্যবহারের প্রযুক্তি সহজলভ্য না হলেও সমুদ্রের অন্য যে সম্পদের বিতরণ দেয়া হয়েছে তা ব্যবহারে উদ্যোগি হতে হবে। এই সম্পদ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে যাতে নিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।