তিনভাগের একভাগ বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবহার পদ্ধতি পরিবর্তন করলে তিনভাগের একভাগ সাশ্রয় সম্ভব। এজন্য সনাতন বাতি পরিবর্তন করতে হবে। পরিবর্তন করতে হবে মটর ও ফ্রিজের কমপ্রেসার। এক প্রবন্ধে বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব সিদ্দিক জোবায়ের একথা বলেন। মঙ্গলবার রাজধানির বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের জ্বালানি সাশ্রয়, সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, বর্তমানে সাধারণ বাতি ব্যবহার করে এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। সাশ্রয়ী বাতি ব্যবহার করলে এক হাজার ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। বৈদ্যুতিক পাখার কারণে খরচ হয় এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এখান থেকে ৫২০ মেগাওয়াট, বৈদ্যুতিক মটর থেকে ৩৬০ মেগাওয়াট, ফ্রিজ থেকে ৭০ মেগাওয়াট, এসি থেকে ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। মোট ছয় হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে প্রায় দুই হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, কিছু প্রতিবন্ধকতা ছাড়া বিদ্যুৎখাতের অগ্রগতি হয়েছে। বিদ্যুৎ খাত দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজারেরও বেশি। কিন্তু সরবরাহ করতে পারি মাত্র সাত হাজার মেগাওয়াট। এই পার্থক্য কমাতে হবে।
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ভবনে ‘বাংলাদেশের জ্বালানি সাশ্রয়, সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক’ সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব তাপস কুমার রায়ের সভাপতিত্বে সেমিনারে বাংলাদেশ রেগুলেটারি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান ও পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বক্তব্য রাখেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে উর্বর জমি কমে যাওয়ার জন্য ইটভাটা দায়ি। ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া উচিত। প্রয়োজনে একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়ে তারপর ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া উচিত। বিষয়টি খুবই জরুরী। এজন্য জনমত তৈরি করতে হবে।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও ইটভাটা বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, ইটভাটাগুলো আমাদের উর্বর মাটি ধ্বংস করছে। আমাদের অফুরন্ত বালি রয়েছে, সেদিকে যেতে পারি। এতে রডের ব্যবহারও কমবে। তিনি বলেন, ট্রান্সফরমারের খুচরা যন্ত্রাংশের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এতে সংকট তৈরী হতে পারে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আবাসিক বাড়িতে এলইডি বাতি ব্যবহার করলে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। তিনি বলেন, এক সময় বিদ্যুৎ দেয়া যায়নি বলে ক্যাপটিভে গ্যাস দেয়া হয়েছিল। এবিষয়ে আগামীতে সিদ্ধােন্তে আসতে হবে। বিসিকের প্লটগুলো পড়ে আসে। কিন্তু তা ব্যবহার না হয়ে যেখানে সেখানে শিল্প হচ্ছে। এতে নিচু জমি ভরাট হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের মিটারিং হলে অবৈধ সংযোগ বন্ধ হবে।
এ আর খান বলেন, গ্যাস সংযোগ পেতে জীবনের অর্ধেক এনার্জি ক্ষয় হয়। ঠিকাদারের মন যোগাতে না পারলে অর্থমন্ত্রী আপনিও গ্যাস সংযোগ পাবেন না।
এ আর খান আরো বলেন, অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারকারীদের শাস্তির বিধান নেই। যে কারণে এই প্রবনতা বেড়েছে। আইন করে হেেলা কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।
তিনি বলেন, গ্যাস কোম্পানিগুলো উৎপাদনের চেয়ে অনেক বেশি বিক্রি দেখাচ্ছে। কিভাবে এটা সম্ভব? আর এই অতিরিক্ত গ্যাস বিক্রির টাকা দিয়ে বছরে ১০ থেকে ১২টি বোনাস নিচ্ছে। এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা উচিত।
সেমিনারের দ্বিতীয় পর্বে এনার্জি এন্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বিইআরসি সদস্য সেলিম মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আহসান, বিএসটিআই এর পরিচালক আবদুল মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল হক, ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল হাসান, আইবির চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন প্রমুখ।