বাড়ছে তাপমাত্রা সঙ্গে শুরু লোডশেডিং
একদিকে শিলাবৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড় অন্যদিকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে তাপপ্রবাহে নাভিশ্বাস অবস্থা। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে শহর ও গ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। এই বাড়তি চাহিদা পুরণ করতে পারছে না বিতরণ কোম্পানিগুলো। তাই শুরু হয়ে গেছে লোডশেডিংও।
গত সপ্তাহে এই সময়ে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি সপ্তাহে সে তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত সপ্তাহে রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল গড়ে ৩২ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৯ ডিগ্রিতে। একইভাবে ঢাকায় গত সপ্তাহের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি, এই সপ্তাহে বেড়ে হয়েছে ৩৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ময়মনসিংহে ২৯ থেকে বেড়ে ৩০ দশমিক ৭, রংপুরে ২৮ থেকে ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, খুলনায় ৩১ থেকে বেড়ে ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে।
চৈত্রের এ সময়েও কখনো কখনো আবহাওয়া একেবারেই ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরদিন আবার প্রচণ্ড গরম। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এটা বিকিরণজনিত ঠাণ্ডা। বঙ্গোপসাগর থেকে বাতাস আসছে না। আসছে উত্তর পশ্চিম কোণ থেকে। ঠাণ্ডা হলেও বাতাস কিন্তু শুষ্ক। অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, উষ্ণতার সবচেয়ে বড় কারণ বিশ্বজুড়ে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহার এবং বনভূমি কমে যাওয়া, গ্রিনহাউসের প্রভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ১৯৭২ সালের মে মাসের শেষে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ১৯৯৫ সালের এপ্রিলে ৪৩ ডিগ্রি, ২০০৯ সালের এপ্রিলে ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বশেষ গত বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৫ ডিগ্রি সেলসিলাস। চলতি বছর এই তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
এদিকে গরমের কারণে বেড়ে গেছে বিদ্যুতের চাহিদা। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারার কারণে রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় শুরু হয়েছে লোডশেডিং। বাসাবোর বাসিন্দা নাজনিন আক্তার জানান, গত কয়েক দিন ধরেই সন্ধ্যার দিকে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আসছে প্রায় এক ঘণ্টা পর। এই ঘটনা একবার নয়। সন্ধ্যার পর কয়েকবার আধা ঘণ্টা করেও বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে। দীর্ঘদিন এ ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট না হওয়ার কারণে ভোগান্তি বেশি হচ্ছে। মধুবাগের বাসিন্দা রাজন জানান, গত কয়েক দিনে প্রায় প্রতিদিনই একবার করে লোডশেডিং হচ্ছে। শীতের সময় এই সমস্যা না হলেও গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবার এই সমস্যা শুরু হয়ে গেল। পুরো গ্রীষ্মকাল তো এখনো পড়েই আছে। শান্তিনগর থেকে আজিজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার থেকেই এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। শুক্রবার দিনের বেলায় বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। শনিবার, রোববার এমনকি সোমবারও লোডশেডিং হয়েছে। তবে প্রতিবার এক ঘণ্টা করে নয়, কখনো কখনো আধা ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ ছিল না।
এ ধরনের অভিযোগের বিপরীতে পিডিবি জানায়, গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল প্রায় সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াট। আর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে সাত হাজার ৯৭৬ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট। এটা হলো সরকারি হিসাব অনুযায়ী। বেসরকারি হিসাবে চাহিদা প্রায় নয় হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে।
অন্যদিকে গ্রামের অবস্থা আরো খারাপ। রাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক থাকলেও দিনের মধ্যে কয়েকবার লোডশেডিং হচ্ছে। আরইবি কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। চাহিদার বিপরীতে যতটুকু বিদ্যুৎ পাওয়া যায় তাই লোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে।