রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত ছাইয়ের কারণে সুন্দরবন দূষিত হবে
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৬০ বছরে ৩৮ মিলিয়ন টনেরও বেশি ছাই উৎপাদন হবে। এরমধ্যে একটি মাত্র অংশ কনক্রিট ও ইট তৈরির কারখানায় ব্যবহার করা হবে। ১২ বছরের মধ্যে ছাইয়ের জন্য তৈরি করা পুকুরটি ভরাট হয়ে যাবে। এরপর উৎপাদিত ছাই সুন্দরবনের চারিদিকের পানি দূষিত করবে। বিপন্ন হবে জীববৈচিত্র্য।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে “রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কয়লার ছাই অপসারণে সম্ভাব্য বিপদাপন্ন পরিবেশ নিরূপন প্রতিবেদন” শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে কমিটির আহবায়ক এডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে গবেষনা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক এ ডেনিস লেমলি। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম, পরিবেশ জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম আবুল বাশার, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আজিজ, কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল মতিন, কমিটির সদস্য শরীফ জামিল ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন।
এ ডেনিস লেমলি তার উপস্থাপনায় বলেন, বাংলাদেশের রামপালে প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৯০ ভাগ উৎপাদন দক্ষতায় ৬০ বছর কর্মক্ষম সময়ে ৩৮ মিলিয়ন টনেরও বেশী ছাই উৎপাদন করবে। ‘ছাই পুনঃব্যবহার পরিকল্পনা‘ অনুসারে শুধুমাত্র কয়লার ছাইয়ের একটি মাত্র অংশ গৃহস্থালীর কনক্রিট ও ইট তৈরীর কারখানায় ব্যবহার করা হবে। এ হিসেবে অর্ধেক ফ্লাই অ্যাস সিমেন্ট ও ইট তৈরীতে ব্যবহার করলেও ছাই বর্জ্য রাখার পুকুরটি ১২ বছরের মধ্যে ভরে বা পূর্ণ হয়ে যাবে। এরপরও কমপক্ষে ২০ মিলিয়ন টন ছাই অপসারন করতে হবে। এজন্য অতিরিক্ত ৫০০ হেক্টর জায়গায় গর্ত ভরাট, রক্ষা-আস্তর ছাড়া ভরাট ও সারফেস ডাম্পিং করতে হবে। কিন্তু এসব পদ্ধতির যেকোনো একটি করলেই সুন্দরবনের চারিদিকে পানিকে দূষিত করবে। তিনি জানান, ছাই অপসারন ও ব্যবস্থাপনা সুন্দরবনের আশেপাশের পানিতে বিষাক্ত ভারী ধাতু মিশ্রিত করবে। যা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে বিপন্ন করে তুলবে।
সুলতানা কামাল বলেন, রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে এর প্রভাবে বড় ধরণের হুমকীর সম্মুখীন হবে সুন্দরবন, যা পুরো জাতিকেই ভোগ করতে হবে। তাই এই প্রকল্প বাতিল করতে সরকারের প্রতি আবারও আহবান জানান। বদরুল ইমাম বলেন, যে কোন কয়লা প্ল্যান্টেই প্রচুর পরিমান ছাই উৎপাদন হয় এবং এই ছাইটা একটা দূষণ। সেলেনিয়াম বলে যে ভারী ধাতু রয়েছে এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর দূষক এবং এর ফলে মাছগুলো বিকৃত হয়ে যাবে, প্রাণীগুলো তাদের প্রজনন ক্ষমতা হারাবে। এই প্রমান বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় রয়েছে। শুধুমাত্র সুন্দরবনকে বাঁচানোর স্বার্থেই রামপাল প্রকল্পের বিরোধীতা করছি।